বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কাবুলে রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভের সঙ্গে মুত্তাকির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি আফগান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিকাশের গতি ত্বরান্বিত হবে। এই সম্পর্কে জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি এবং আবাসন খাতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক চোরাচালান দমনে তালেবান সরকারের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মুত্তাকি বলেছেন, তালেবান সরকারের বিষয়ে রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনা অন্য দেশের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে ইতিবাচক সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গঠনমূলক যোগাযোগের এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।
২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখল নেওয়ার পর থেকেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল তালেবান সরকার। তবে এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নারীবিদ্বেষী নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছে।
সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর দমন-পীড়ন, খেলাধুলা ও শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার রাস্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করার মতো একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে তালেবান সরকার। সর্বশেষ দেশটিতে দাবা খেলা নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের ওপর আরও একটি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে তাদের চরম নারী দমন নীতি।
তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির নারী ও মেয়েশিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ওপর একগাদা নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে। নারীদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা আপাতত নিষিদ্ধ আছে। সর্বশেষ এক ঘোষণার মাধ্যমে নারীদের ওপর চরম অবমাননাকর এবং দমনমূলক এক আইন করে তালেবান সরকার।
ওই আইন অনুযায়ী, জনসম্মুখে কোনও নারীর কথা বা হাসির আওয়াজ শোনা গেলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবে এত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও তালেবানের সঙ্গে কখনও সম্পর্ক ছিন্ন করেনি রুশ সরকার। ২০২১ সালে মার্কিন সেনা অপসারণের পর অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করলেও কাবুলের রুশ দূতাবাস বন্ধ করেনি রাশিয়া। তাদের যুক্তি ছিল, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কাবুলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এর পরের বছর তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও একধাপ এগিয়ে নেয় ক্রেমলিন। মানবাধিকার ও নারী অধিকার লঙ্ঘনের একের পর এক খবর আসতে থাকলেও সেগুলো উপেক্ষা করে তালেবানের সঙ্গে এক আন্তর্জাতিক চুক্তি করে রাশিয়া, যার আওতায় তেল, গ্যাস এবং গম সরবরাহের কথা বলা হয়।
চলতি বছর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নেয় মস্কো। এপ্রিল মাসে তালেবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে অপসারণ করা হয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, কাবুল ও মস্কোর মধ্যে সামগ্রিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।
নারী দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাজারো অভিযোগের পরও কাবুলে রাষ্ট্রদূত রেখেছে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে এবং প্রকাশ্যে রাশিয়াই প্রথম তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করলো।