ওমিক্রন ঠেকাতে কাপড়ের মাস্ক কতটা কার্যকর

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়োজিতরা বলছেন, হয়ত সময় এসে গেছে মাস্ক বদলানোর। দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ওমিক্রনের বিস্তারে করোনার টিকা নেওয়া মানুষেরাও আক্রান্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছেন কাপড়ের মাস্ক পরিধান বাদ দেওয়ার জন্য। তারা বলছেন, হয়ত এই মাস্ক ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথাযথ সুরক্ষা দিতে পারছে না। কাপড়ের মাস্কের বদলে তারা সার্জিক্যাল মডেলের বা আরও শক্তিশালী শ্বাসযন্ত্রের মাস্ক ব্যবহার করার জন্য।

মায়ো ক্লিনিক বৃহস্পতিবার থেকে সব রোগী ও পরিদর্শনকারীদের জন্য সার্জিক্যাল বা এন৯৫ অথবা কেএন৯৫ মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। কোনও ব্যক্তি যদি এক স্তরের, ঘরে নির্মিত কাপড়ের মাস্ক বা এ জাতীয় কিছু পরে ক্লিনিকে আসেন তাদেরকে এগুলোর ওপর চিকিৎসা ব্যবস্থায় উপযুক্ত মাস্ক পরতে হচ্ছে।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এক স্তরের কাপড়ের মাস্ক অনেক মানুষের কাছে আরামদায়ক এবং স্টাইলের জন্য উপযুক্ত। এটি ভাইরাসের বড় ড্রপলেট আটকাতে পারে। কিন্তু ভাইরাসবাহী বায়ু কণা বা পার্টিকেল ঠেকানোর ক্ষেত্রে এমন মাস্ক কার্যকর না।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সর্বশেষ নির্দেশনায় মানুষকে মাস্ক পরতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশনায় কাপড়ের একাধিক স্তরের মাস্ক, আটসাঁটভাবে আটকানো এবং নাক পুরোপুরি ঢেকে রাখতে পারে এমন মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, কাপড়ের মাস্কের নিচে বহুস্তরের একবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক পরা যেতে পারে। এন৯৫ মাস্ক চিকিৎসাকর্মীদের পরিধান করার কথা বলা হয়েছে।

তবে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত অনেকে বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট মাস্ক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে মানুষকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কাপড়ের মাস্ক অন্তর্ভুক্ত নয়।

সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা গান্ধী বলেন, কেউ যদি প্রকৃতই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে না চায় তাহলে তাকে সঠিক ধরনের মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে।

তিনি এন৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। যা যুক্তরাষ্ট্রে সনদ পাওয়া। অথবা চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপে স্বীকৃত যথাক্রমে কেএন৯৫, কেএফ৯৪ ও এফএফপি২ মাস্ক পরা যেতে পারে।

যদি এসব মাস্ক পাওয়া না যায় তাহলে দুটি মাস্ক- একটি বহুস্তরের কাপড়ের মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্কের উপরে পরার পরামর্শ দিচ্ছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, যদি সবাই শুধু কাপড়ের মাস্ক বা শুধু সার্জিক্যাল মাস্ক পরেন তাহলে কোনও পার্থক্য হবে না।

এই খাতে নিয়োজিত আরও কয়েকজন বলছেন, উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্ক সঠিকভাবে পরিধান করা হলে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু ওমিক্রনের বিরুদ্ধে এসব মাস্ক কতটুকু কার্যকর তা নিয়ে আরও তথ্য ও গবেষণা প্রয়োজন।

ব্রিগাম অ্যান্ড উইম্যান’স হসপিটালের চিকিৎসক রানু ডিলন বলেন, কোনও কিছু পরিধান না করার চেয়ে যে কোনও মাস্ক পরা ভালো। কাপড় ও সার্জিক্যাল মাস্ক এন৯৫ মানের মাস্কের মতো ভালো না।

চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মেগান শ্রীনিবাস জানান, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কেএন৯৫ মাস্ক পরিধান করেন। যদি এগুলো না পাওয়া যায় তাহলে একবার ব্যবহারযোগ্য অনুমোদিত সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেন, মানুষকে আমাদের সচেতন করতে হবে যে, ভিন্ন মানের মাস্ক পরার কারণে ভিন্নমাত্রার সুরক্ষা পাওয়া যায়। সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল