ট্রাম্পের কর বিল পাস হলে রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যয় বাড়বে ভারতীয়দের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের বাজেট কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর কমানোর বিল অনুমোদনের দিকে এক ধাপ এগিয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে আমেরিকায় থাকা লক্ষাধিক ভারতীয় অভিবাসী ও অস্থায়ী বাসিন্দার জন্য নিজ দেশে টাকা পাঠানো হবে আগের চেয়ে ব্যয়বহুল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

১ হাজার ১১৬ পৃষ্ঠার এই প্রস্তাবিত আইনের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন—এমন ব্যক্তিদের যেকোনও আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের ওপর ৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। এই করের আওতায় পড়বেন এইচ-১বি ভিসাধারী, গ্রিন কার্ডধারী এবং অন্যান্য অ-অভিবাসী বাসিন্দারা। কর কেটে রাখা হবে অর্থ পাঠানোর সময়ই।

আইনে বলা হয়েছে, যাচাইকৃত মার্কিন প্রেরক অর্থাৎ মার্কিন নাগরিক বা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তা প্রাপ্ত প্রেরকদের এই কর দিতে হবে না। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যেকোনও পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠালেও তাদের জন্য কোনও কর প্রযোজ্য হবে না।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ লাখ ভারতীয় বাস করেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৩২ লাখই ভারতীয় বংশোদ্ভূত। বিলটি আইনে পরিণত হলে তাদের বড় অংশের ওপরই নতুন এই রেমিট্যান্স করের প্রভাব পড়বে।

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত এক জরিপে জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক রেমিট্যান্সের মোট পরিমাণ ছিল ১১৮.৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এসেছে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার—যা মোট রেমিট্যান্সের ২৮ শতাংশ। এই হিসাবে ৫ শতাংশ কর আরোপে ভারতীয়দের কাছ থেকে অতিরিক্ত ১.৬ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

রেমিট্যান্সের বাইরে শেয়ার বিক্রির লভ্যাংশ, স্টক অপশনের মাধ্যমে আয় এবং অন্যান্য বিনিয়োগ আয় যেগুলো প্রবাসীরা দেশে পরিবারের জন্য পাঠান বা দেশীয় খাতে বিনিয়োগ করেন—তাও এই ৫ শতাংশ করের আওতায় পড়বে।

বিলটি শুধু রেমিট্যান্সে করেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী কৌশলেরও একটি বড় অংশ। বিলের আওতায় ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ফের শুরু করতে এবং ব্যাপক অভিবাসী বিতাড়ন অভিযান পরিচালনার জন্য।

এর মধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে নতুন ৩ হাজার সীমান্ত টহল কর্মী ও ৫ হাজার কাস্টমস কর্মকর্তাকে নিয়োগের জন্য। ২.১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে কর্মকর্তা নিয়োগ ও ধরে রাখার বোনাসের জন্য। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বিভাগে আরও ১০ হাজার কর্মকর্তা ও তদন্তকারী নিয়োগের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীদের জন্য প্রথমবারের মতো ১ হাজার ডলার ফি আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র আগে কখনও এমন কর আরোপ করেনি, এটি অস্ট্রেলিয়া ও ইরানের মতো কিছু সীমিতসংখ্যক দেশের সঙ্গে তুলনীয়।

সব মিলিয়ে বছরে ১০ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো ও ১ লাখ অভিবাসীকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখার পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

শুক্রবার বাজেট কমিটির কট্টরপন্থি কিছু সদস্য আইনটি আটকে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, এতে রিপাবলিকান নেতৃত্ব এবং ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হন। তবে রবিবার গভীর রাতে ১৭-১৬ ভোটে বিলটি পাস হয়, ফলে এটি এখন কংগ্রেসের সাধারণ অধিবেশনে ভোটের জন্য এক ধাপ এগিয়ে গেলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিল পাস হলে তা শুধু ভারতীয়দের জন্যই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে আসা প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় আর্থিক ও রাজনৈতিক ধাক্কা হবে। এতে আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তরের খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগও তীব্র হবে।