অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতের রাজস্থান ও পাঞ্জাবে সতর্কতা

পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার একদিন পর সীমান্তবর্তী রাজ্য রাজস্থান ও পাঞ্জাবে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) পুলিশ সদস্যদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পেহেলগামে জঙ্গি হামলার বদলা নেওয়ার পর, স্থানীয় প্রশাসন এখন পাকিস্তানের দিক থেকে সম্ভাব্য উত্তেজনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে রাজস্থানের। এই রাজ্যেই তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যদের সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সরাসরি গুলি চালানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। যারা সীমান্তবর্তী এলাকায় বাস করেন না, তাদের চলাচলেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। 

ভারতীয় বিমান বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধবিমানগুলো নিয়মিত টহল দেওয়ায় জোধপুর, কিশনগড় ও বিকানের বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট চলাচল ৯ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

রাজ্যের বেশিরভাগ জেলার স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশ ও রেলওয়ের কর্মীদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জয়সলমের ও জোধপুরে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে। ব্ল্যাকআউট উন্নত গতিসম্পন্ন বিমানগুলোর চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করে, যা শত্রু পাইলটদের সঠিকভাবে আঘাত হানতে বাধা দেয়।

পাঞ্জাবেও পুলিশ সদস্যদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সীমান্তে উত্তেজনার কারণে সব সরকারি কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।

ভারত গতকাল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্তিত কাশ্মীরের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে জঙ্গি অবকাঠামো ধ্বংস করে। এই অভিযানের কোডনেম ছিল অপারেশন সিন্দুর। এটি ছিল পেহেলগাম হামলার জবাব।

ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে তারা পাকিস্তানের কোনও সামরিক স্থাপনায় হামলা করেনি। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল শুধু জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করা, যেগুলো ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হতো।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রী বলেছেন, ভারতের পদক্ষেপ ছিল পরিমিত, উত্তেজনাবিহীন, তুলনামূলক ও দায়িত্বশীল। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল জঙ্গি অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং যেসব জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারে, তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট করা।’

তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার সামিল’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, তার দেশ ‘উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখে।’