ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। মার্চে কাশ্মীরে ২৫ জন ভারতীয় পর্যটক ও একজন গাইড নিহত হওয়ার পর থেকে দিল্লি ইসলামাবাদকে দায়ী করে প্রতিশোধের ঘোষণা দেয়। এরপর বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে একযোগে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
ভারত দাবি করেছে, তারা শুধু লস্কর-ই-তাইয়্যেবা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটি ও মাদ্রাসাগুলোতে আঘাত হেনেছে। পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনার ওপর কোনও হামলা চালানো হয়নি বলেও জানানো হয়। ভারতীয় হামলাগুলো সম্পূর্ণ ভারতীয় আকাশসীমা থেকেই পরিচালিত হয়েছে, ২০১৯ সালের মতো ভুল না করতে চেয়েই এমন পদক্ষেপ—বলছেন বিশ্লেষকেরা।
অন্যদিকে, পাকিস্তান একে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র সামিল বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত আমাদের সার্বভৌমত্বে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনীকে পাল্টা জবাব দিতে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির এর আগে বলেছিলেন, ভারতের যেকোনও আগ্রাসনের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, পাল্টা প্রতিক্রিয়ার রাশ মূলত মুনিরের হাতেই। দিল্লিতে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, মুনিরের আগ্রাসী অবস্থান ও কাশ্মীর নিয়ে তার বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় দেশই যুদ্ধ এড়াতে চাইলেও, রাজনৈতিক চাপ, প্রতিশোধের ভাষা এবং সেনা নেতৃত্বের আগ্রাসী ভূমিকার কারণে যেকোনও সময় বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে ভারত-পাকিস্তান। এখন প্রয়োজন সংযম ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির সক্রিয় হস্তক্ষেপ।
রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক আইয়েশা সিদ্দিক বলেন, জেনারেল মুনির একজন কৌশলী চিন্তাবিদ নন, বরং তীব্র জাতীয়তাবাদী এবং বিপজ্জনকভাবে তৎপর।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় মুনিরের গোঁড়া দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র পাঞ্জাব প্রদেশের একটি মসজিদেও আঘাত হেনেছে বলে পাকিস্তানের দাবি, যা দেশটির সামরিক ও রাজনৈতিক আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় অংশই এই অঞ্চল থেকেই আসে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম ভারতীয় মিসাইল পাঞ্জাব অঞ্চলে আঘাত হানলো।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান দ্রুত পাল্টা জবাব দেবে এবং দেরি যত বাড়বে, পরিস্থিতি ততই জটিল হতে থাকবে। তবে বড় প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান কাকে লক্ষ্য করবে? ভারত যেভাবে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছে, তেমনি লক্ষ্যবস্তু পাকিস্তানের হাতে নেই। ফলে সরাসরি ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলা হলে সেটা হবে সংঘাতের বিস্তার।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, এই উত্তেজনা প্রশমনে অতীতে যেমন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, এবার তার কোনও লক্ষণ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘তারা অনেক দিন ধরে লড়ছে। আমি চাই খুব শিগগিরই এটা শেষ হোক।’ তার এই মন্তব্য অনেকের কাছেই দায়সারা মনে হয়েছে।
সিদ্দিকা বলেন, ‘আমার আশঙ্কা, এই প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তান একা হয়ে পড়েছে। যদি নিরপেক্ষ কোনও শক্তি এই দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে পরিস্থিতি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে।