লকডাউনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে জার্মানি

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও দেশটির ১৬ টি রাজ্যের প্রধান মধ্য মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাস লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে যাচ্ছে। নতুন জারি করা বিধিমালায় মানুষকে দোকান ও গণপরিবহনে মাস্ক পরতে হবে। বুধবার সরকারের একটি খসড়া নথির বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এখবর জানিয়েছে।
করোনা সংকট নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে জার্মানিতে লাগাতার লকডাউন চলছে৷ কড়াকড়ি শিথিল করার বদলে বরং আরও জোরালো করা হয়েছে৷ কিন্তু আবারও তা বাড়ানো হয়েছে।বুধবার জানানো হয়েছে, এই লকডাউন বহাল থাকবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত।
খবরে বলা হয়েছে, লকডাউন হয় পুরোপুরি তুলে নেওয়া অথবা কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের জন্য চাপ বাড়ছে৷ কিন্তু বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ এখনই এমন পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ তাদের মতে, এত সময় জুড়ে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমিয়ে এনে যে সুফল পাওয়া গেছে, যোগাযোগ বাড়লে সেই সাফল্য দ্রুত উধাও হয়ে যেতে পারে৷ বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের নতুন মিউট্যান্ট বা আরও ছোঁয়াচে সংস্করণগুলো দৈনিক সংক্রমণের হার মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে৷ জনসাধারণের সামান্য অংশ এখনও পর্যন্ত করোনার টিকা পাওয়ায় লকডাউন ছাড়া আপাতত কোনও হাতিয়ার নেই বলে তারা মনে করছেন৷
এমন প্রেক্ষাপটে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে বসেন।পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা করবেন৷ বর্তমান লকডাউনের মেয়াদ ১৪ই ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে৷
খসড়া নথি অনুযায়ী মঙ্গলবার ম্যার্কেল নিজে কোনও ছাড় ছাড়াই আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করছেন৷ তার মতে, দৈনিক সংক্রমণের হার আরো কমিয়ে আনার আগে মানুষের মেলামেশার সুযোগ দিলে বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে আসা মিউট্যান্ট আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ বর্তমানে প্রতি ১০ দিনে এই সংস্করণ দ্বিগুণ হয়ে উঠছে৷ সেই হার আরও বাড়লে আবার নতুন করে দীর্ঘ লকডাউনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে৷
একাধিক রাজ্য সরকার লকডাউন সত্ত্বেও ধাপে ধাপে কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইমারি স্কুল খোলার বিভিন্ন প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে৷ দোকানবাজার ও সেলুন আবার খোলার জন্যও চাপ বাড়ছে৷ কিন্তু কড়া লকডাউন সত্ত্বেও সেই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷
লকডাউনের কারণে একদিকে সাধারণ মানুষের হতাশা ও ক্লান্তি এবং অন্যদিকে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টিও জার্মানির রাজনীতিকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলও দেশবাসীর জন্য এমন কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তাদের পরিবারের জন্য চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী জার্মানির মানুষ সার্বিকভাবে ম্যার্কেলের করোনা মোকাবিলা নীতির প্রতি সমর্থন দেখিয়ে এলেও ধীরে ধীরে ক্লান্তিও বেড়ে চলেছে৷ কড়াকড়ি শিথিল করার শর্তাবলি সম্পর্কে স্পষ্ট নীতিমালার দাবিও দানা বাঁধছে৷ টিকাদান কর্মসূচির ধীর গতি সম্পর্কেও ক্ষোভ বাড়ছে৷