বাখমুতে ইউক্রেনীয় সাফল্য কি যুদ্ধের গতি পাল্টে দেবে?

পূর্বাঞ্চলীয় বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে প্রায় এক বছরের কাছাকাছি সময় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সেখানে দাঁত কামড়ে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করেছে। শীত শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করলে এপ্রিলের দিকে তারা রক্ষণাত্মক অবস্থান ছেড়ে আক্রমণে যায়। আর তাতে সাফল্য পাচ্ছে কিয়েভ। রাশিয়া কয়েক সপ্তাহের হামলায় যে ভূখণ্ড দখল করেছিল মাত্র কয়েক দিনে ইউক্রেনীয় বাহিনী তা পুনরুদ্ধার করেছে। পাল্টা আক্রমণ শুরুর আগে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এই সাফল্যে উজ্জীবিত ইউক্রেনের সেনারা। এবার তারা আশা করছে, বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণে যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে যাবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

বাখমুত দখলে রাশিয়ার আক্রমণের নেতৃত্বে থাকা রুশ ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন দাবি করেছিলেন, তারা শহরটি দখলের খুব কাছাকাছি। কিন্তু তার এমন দাবি ছিল ভুল। ইউক্রেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং রুশদের লক্ষ্য করে তারা হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলায় কিছু কিছু স্থান থেকে পিছু হটছে রুশ সেনারা।

বাখমুতের বেশিরভাগ ভূখণ্ড এখনও রাশিয়ার সেনাদের দখলে। সম্প্রতি ইউক্রেন যে সাফল্য পেয়েছে তাতে খুব বেশি ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। এগুলোও ধরে রাখতে পারবে বলে কোনও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু প্রায় ৯ মাসের মধ্যে ইউক্রেনীয়রা প্রথমবার আক্রমণে গিয়েছে এবং অন্তত এই মুহূর্তে তারা মোমেন্টাম পেয়েছে।  

ইউক্রেনের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে কয়েক মাস আগে সেখানে যে পরিস্থিতি ছিল তা পাল্টে যেতে পারে। বাখমুতে ঘেরাও এবং ফাঁদে পড়তে পারে রুশ সেনারা। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা রেখা ভেদ করতে যে ইউক্রেন সমর্থ তা প্রমাণিত হতে পারে। বাখমুতে সাফল্য ইউক্রেনীয় সেনাদের মনোবল ব্যাপক বাড়াবে এবং রুশদের বিপর্যয় ঘটবে। কারণ কয়েক মাসের আক্রমণে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও তাদের ব্যর্থ হতে হবে।

বাখমুতে ইউক্রেনীয় ট্যাংক। ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস

এমন সময় বাখমুতের যুদ্ধের গতি রাশিয়ার বিপক্ষে যাচ্ছে যখন বৃহত্তর পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন। কিয়েভে চাইছে পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধের নাটকীয় মোড় পরিবর্তন করতে। ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা বলছেন, বাখমুতের লড়াইয়ের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা ৬০০ মাইল দীর্ঘ সম্মুখ রেখায় প্রয়োগ করা সম্ভব।

বাখমুতে লড়াইরত ইউক্রেনের ৩য় অ্যাসল্ট ব্রিগেডের কমান্ডার আন্দ্রি বিলেতস্কি বলেন, যখন পিছু হটা শুরু হয় তখন তা থামানো খুব কঠিন। এগিয়ে যেতে চাইলে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন।

বিলেতস্কি সতর্ক বলেছেন, তিনি আরও ধারাবাহিক সাফল্যের অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ এতে লড়াইয়ের পূর্ণাঙ্গ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। তবে তিনি আশাবাদী।

ইউক্রেনীয় পদাতিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার কর্নেল জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরকি মঙ্গলবার রণক্ষেত্র পরিদর্শনে গিয়ে সেনাদের বরেছেন, ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধারা বাখমুতে প্রবেশ করেছে ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মতো।

সিরস্কিসহ অপর ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা সতর্ক করে বলছেন, বাখমুতে এখনও তুমুল লড়াই হচ্ছে।

মার্চ মাসে বাখমুত শহর। ছবি: এপি

মঙ্গলবার ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, বাখমুতে এখনও অগ্রসর হচ্ছে শত্রুরা। তারা কামানের গোলাবর্ষণ করে শহরটি ধ্বংস করছে।

ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তারা চাইছেন, বাখমুতে রাশিয়ার বিপুল সংখ্যক সেনাকে লড়াইয়ে আটকে রাখতে। যাতে করে অন্যত্র তাদের মোতায়েন করতে না পারে মস্কো। তারা বলছেন, রাশিয়া ইতোমধ্যে নতুন করে সেনা পাঠানো শুরু করেছে বাখমুতে। তবু ইউক্রেনীয়রা রুশদের পিছু ঠেলে দিচ্ছে।

রচান কনসাল্টিং-এর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কনরাদ মুজিকা বলেছেন, ইউক্রেনের সাম্প্রতিক অগ্রগতি রাশিয়ার মৌলিক দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনী ও ওয়াগনার গ্রুপের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, দুর্বল যোগাযোগ ও মনোবলের ঘাটতি রয়েছে।

কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে দুর্বল করতে বাখমুতের লড়াই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতি যতক্ষণ বেশি হচ্ছে ততক্ষণ তাদের লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে।

এখন ইউক্রেনীয়রা অগ্রসর হতে শুরু করায় কমান্ডার ও কর্মকর্তারা আশা করছেন, রণক্ষেত্রের সমীকরণ আবারও পাল্টে যেতে পারে।