ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার

দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধের পর ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে অন্তত ৪৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশটির ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ২ দশমিক ৮ গুণ। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় কমিশন ও ইউক্রেনীয় সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পর্যালোচনা করা হয়েছে। এই প্রাক্কলনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ, জনগণের জীবন ও জীবিকায় প্রভাব এবং পুনরায় গড়ে তোলার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

গত বছর মার্চে দশ বছর মেয়াদি পুনর্গঠনে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১১ বিলিয়ন ডলার। যা এবারের প্রাক্কলনে বেড়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, আবাসন খাতে প্রয়োজন ৮০ বিলিয়ন ডলার, পরিবহনে ৭৪ বিলিয়ন, বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ৬৭.৫ বিলিয়ন ডলার। 

বিশ্বব্যাংকের পূর্ব ইউরোপের আঞ্চলিক কান্ট্রি পরিচালক অরূপ ব্যানার্জী বলেন, ৪৮৬ বিলিয়ন ডলার একটি অবিশ্বাস্য বড় অঙ্ক, কিন্তু অবশ্যই এতে বাস্তব চাহিদার প্রতিফলন রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসে যে গতিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা ধীরে ধীরে কমে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধে সরাসরি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫২ বিলিয়ন ডলার। বেশি ক্ষতি হয়েছে ডনেস্ক, খারকিভ, লুহানস্ক, জাপোরিজ্জিয়া, খেরসন ও কিয়েভে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটেছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণসহ যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যয় আরও ৪৯৯ বিলিয়ন ডলার হতে পারে।

ইউক্রেনীয় বা অংশীদার অর্থায়নে ও আন্তর্জাতিক সমর্থনে যেসব প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়ে গেছে সেগুলোকে নতুন প্রাক্কলনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

এতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের মোট ২০ লাখ হাউজিং ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, ৮ হাজার ৪০০ কিলোমিটার সড়ক, মহাসড়ক ও অন্যান্য জাতীয় সড়ক এবং প্রায় ৩০০ সেতু ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস হয়েছে। 

গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে অতি জরুরি মেরামত, পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের জন্য ইউক্রেনের প্রয়োজন ১৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বাজেট ও দাতাদের সহযোগিতায় ৫.৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। 

অরূপ ব্যানার্জী বলেছেন, যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেনের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য সহনশীলতা দেখিয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ প্রমাণ করে দেশটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো সুযোগ। যুদ্ধের মধ্যেও পাঁচটির মধ্যে চারটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনে সক্রিয় রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫.৯ মিলিয়ন ইউক্রেনীয় নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ২০২৩ সালে পর্যালোচনায় এই সংখ্যা ছিল ৮.১ মিলিয়ন। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যাও ৫.৪ মিলিয়ন থেকে ৩.৭ মিলিয়নে নেমে এসেছে।

সূত্র: রয়টার্স