সার্বিয়ায় গড়ে উঠছে ‘মিনি রাশিয়া’

সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের গ্রীষ্মের এক প্রখর সকালে, রুশ পেশাদার আইস স্কেটার ভাদিম মোরুস একটি আউটডোর রিংকে স্কেট করছেন। মস্কো থেকে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও, বেলগ্রেডকে এখন নিজেকে বেশ ঘরের মতো মনে হচ্ছে তার।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর তিনি ও তার বাগদত্তা রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসেন। তাদের মতো হাজার হাজার রুশ নাগরিক সেই সময় সার্বিয়ায় আশ্রয় নেন। দেশটির সঙ্গে মস্কোর প্রাচীন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক থাকার কারণে সেখানে আশ্রয় নিতে আগ্রহী রুশরা।

মোরুস জানান, সার্বিয়ায় অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে এমন আইস স্কেটার কম। তাই আমার কাছে প্রচুর সার্বিয়ান শিক্ষার্থী রয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংঘাত, বাধ্যতামূলক সামরিক নিয়োগ অথবা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাজনীতি থেকে পালিয়ে আসা রুশদের সার্বিয়ায় একটি জীবন্ত সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও দুই ডজন অভিবাসীর সঙ্গে আলাপ করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা এসব কথা জানিয়েছে।

যদিও জার্মানির মতো দেশের তুলনায় সার্বিয়ায় রুশদের সংখ্যা কম। তবু বেলগ্রেডের মতো ২০ লাখের কম জনসংখ্যার শহরে তাদের উপস্থিতি খুব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।

বেলগ্রেডে রুশ মালিকানাধীন ক্লাব, কিন্ডারগার্টেন এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ছে। রাশিয়ার নাগরিকেরা রুশ দোকান থেকে খাবার কেনেন, রুশ ক্লাবে সংগীত, কমেডি অনুষ্ঠান ও শিল্প প্রদর্শনী উপভোগ করেন।

সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি রুশ সার্বিয়ায় অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে রুশরা ১১ হাজার ৮১ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা, হসপিটালিটি ও ক্রীড়া স্কুল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

২০২২ সালের শরৎকালে রাশিয়ার সামরিক নিয়োগ এড়াতে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে পালিয়ে আসেন ৪২ বছর বয়সী ভেটেরিনারিয়ান ভিক্টর। সার্বিয়ায় যোগ্যতা না থাকায় তিনি বেলগ্রেডে শুধু রুশদের জন্য ছোটখাটো কাজ করে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ভিক্টর বলেন, আমি পাইপলাইনের মেরামত, বৈদ্যুতিক স্থাপনা, জানালা মেরামত এবং এমনকি আসবাবও তৈরি করি। সার্বিয়ার গ্রাহকদের আমার দরকার নেই।

সার্বিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্ক শতাব্দীপ্রাচীন এবং এখনও মিত্রতাপূর্ণ। যদিও সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চায় এবং ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, বহু শ্বেতাঙ্গা রুশ সোভিয়েত থেকে পালিয়ে সার্ব, ক্রোয়াট ও স্লোভেনদের রাজ্যে আশ্রয় নেয়।

তবে অনেক রুশ নাগরিক এখনও সার্বিয়ায় পুরোপুরি একীভূত হতে পারছেন না এবং তারা সার্বিয়ার ভেতরেই এক ‘মিনি রাশিয়া’ গড়ে তুলেছেন। বেলগ্রেডের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার জোকিচ বলেন, রাশিয়ার সংস্কৃতির টান এতটাই শক্তিশালী যে প্রথম প্রজন্মের রুশ অভিবাসীরা যে সমাজে বসবাস করছে, সে সমাজের সঙ্গে মিশতে চায় না।

আইস স্কেটার মোরুস রাশিয়া ছাড়ার কারণ নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি প্রকাশ করলেও, তার বাগদত্তা আলেকজান্দ্রা মাশকানোভা বলেন, আমরা আদর্শগত কারণে দেশ ছেড়েছি। ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখের কয়েকদিন পরে, আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি এবং তখনই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই।

সূত্র: রয়টার্স