বড় ধরনের রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীরবতায়’ ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি

চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার একটি বড়ধরনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উৎসাহিত করছে। শনিবার রাতের ওই হামলায় রেকর্ড ৩৬৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ে রাশিয়া। ইউক্রেনজুড়ে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে তিনজনই শিশু। আহত হয়েছে কয়েক ডজন। রাজধানী কিয়েভে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় আক্রমণগুলোর একটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার এই নিষ্ঠুরতা থামানো সম্ভব নয়, যদি না রুশ নেতৃত্বের ওপর কঠোর চাপ দেওয়া হয়। বিশ্বের নীরবতা—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের—পুতিনকে আরও উসকে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্ব ছুটিতে গেলেও, যুদ্ধ কিন্তু বন্ধ থাকে না। সপ্তাহের দিন-ছুটির দিন কোনোটিই রাশিয়ার আক্রমণ থামাতে পারে না।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর বরাতে জানানো হয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু করে দেশজুড়ে চালানো হয় সমন্বিত হামলা। কিয়েভসহ ১৩টি অঞ্চলে আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তারা ৪৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং ২৬৬টি ড্রোন ধ্বংস করেছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লিমেঙ্কো বলেন, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত ও নিষ্ঠুর আক্রমণ, যার লক্ষ্য ছিল বেসামরিক জনগণ।

তিনি জানান, ১৩টি অঞ্চলে আক্রমণে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০টি আবাসিক ভবন এবং ২৭টি স্থানে আগুন লেগেছে।

কিয়েভ অঞ্চলে নিহত হয় চারজন এবং আহত হয় ১৬ জন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। শহরজুড়ে আগুন ও ভবনধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে। আতঙ্কিত মানুষ আশ্রয়ের জন্য ছুটে গেছে পাতাল রেলস্টেশনগুলোতে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের সামরিক বিমানঘাঁটি, গোলাবারুদ মজুতাগার ও বৈদ্যুতিক যুদ্ধ স্টেশনগুলোতে আঘাত হেনেছে। ১৪২টি স্থানে ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো।

ইউক্রেনের মতে, এই হামলা ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়, যেটিতে ব্যবহৃত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সংখ্যার দিক থেকে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া এখন দ্রুতগতিতে উন্নত মানের শাহেদ ড্রোন উৎপাদন করছে, যেগুলো শনাক্ত করা কঠিন এবং আরও বেশি বিস্ফোরকবাহী।

এদিকে রাশিয়ার ভেতরেও ইউক্রেনের ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত দেশটির ১২টি অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ১১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

মস্কোর মেয়র সার্গেই সোবিয়ানিন জানান, রাজধানীর দিকে আসা ১২টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তুলা অঞ্চলে একটি আবাসিক ভবনের আঙিনায় ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে কিছু অ্যাপার্টমেন্টের জানালা ভেঙে যায়।

রবিবার ছিল তিন দিনব্যাপী যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের শেষ দিন। শুক্রবার ও শনিবার ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়পক্ষ মিলিয়ে ৯৯৭ জন করে বন্দিকে ফেরত পেয়েছে। এই বিনিময় এসেছে তুরস্কে অনুষ্ঠিত তিন বছরের মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ হয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আলোচনার ফলাফল ইতিবাচক এবং শান্তিচুক্তির পথে আলোচনা শিগগিরই শুরু হবে।

তবে পুতিন এখনও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নেননি। তিনি শুধু বলেছেন, ভবিষ্যৎ শান্তি নিয়ে একটি স্মারক চুক্তি তৈরি করতে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করবে।