মিয়ানমারে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় চলতি মে মাসের শেষ নাগাদ শেষ হতে যাওয়া যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো এবং এর আওতা বিস্তারের আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। রবিবার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামাদ হাসান এ আহ্বান জানান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
মোহামাদ হাসান বলেন, মিয়ানমারের সব পক্ষকে আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানাই। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ এবং প্রভাবিত অঞ্চল ছাড়িয়ে এর পরিসর বাড়ানোর প্রস্তাব করছি, যাতে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হয় এবং পুনর্গঠনের কঠিন পথে কিছুটা অগ্রগতি সম্ভব হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর আসিয়ান একটি পাঁচ-দফা শান্তিচুক্তি করলেও জান্তা সরকার তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর জেরে জান্তা নেতাদের আসিয়ানের বার্ষিক বৈঠক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আসিয়ানের ঘূর্ণায়মান সভাপতির দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া বলেছে, সহিংসতার লাগাম টেনে ধীরে ধীরে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তবে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করা কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোহামাদ হাসান। তার ভাষায়, দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর দেশটির সামরিক সরকার সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল। যদিও সেই সময় থেকেও সেনাবাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ব্যাংককে মিয়ানমারের সামরিক প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার আহ্বান জানান। পরে আনোয়ার বলেন, আসিয়ান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আমরা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিতে ঐকমত্য গড়ে তুলতে চাই। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও সামরিক সরকার তাদের প্রাণঘাতী বিমান অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটি স্কুলে বিমান হামলায় ২০ শিশুসহ ২২ জন নিহত হয়।
এদিকে, সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী এবং বিরোধী আন্দোলনের পক্ষগুলো নিজেরা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় সামরিক নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে হামলার কারণে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার চলতি বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিদ্রোহীদের সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (ঐক্য সরকার) জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সেনা সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।