পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরও চায় ভারত, জীবন দিতে প্রস্তুত বললেন অমিত শাহ

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ অধিকার বাতিল এবং দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার রেশ কাটতে না কাটতেই নরেন্দ্র মোদির সরকারের পরবর্তী লক্ষ্যের কথা সামনে এসেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারত সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য হলো পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির।

amit-shah-modi-bjp-meet-pti

ভারতীয় সংবিধানের যে ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে কাশ্মিরকে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিলো, গত সোমবার সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ ঘোষণা দেন তিনি। পরে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে কংগ্রেসসহ বিরোধীদের তীব্র বাধা ও বাগ-বিতণ্ডার মধ্যেই জম্মু-কাশ্মির রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত দুইটি অঞ্চলে পরিণত করার বিলটি পাস হয়। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায়ও এ বিলটি পাস হয়।

মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মির পুনর্গঠন বিল উপস্থাপনের সময় প্রথম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির প্রসঙ্গ তোলেন কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী। তিনি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির প্রসঙ্গে সরকার কী ভাবছে, তা জানতে চান। এ প্রশ্নে দৃশ্যতই রেগে যান শাহ। বলেন, ‘যখন আমি জম্মু-কাশ্মিরের কথা বলি, তখন তার মধ্যে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরও থাকে।’

এ সময় বিরোধীরা অমিত শাহের বক্তব্যে বাধা দেওয়ায় তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আরও উচ্চ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ভারতেরই অংশ।’ এর পরে কেন তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন, সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অমিত শাহ পাল্টা প্রশ্নে কংগ্রেসের কাছে জানতে চান, ‘আপনারা কি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরকে ভারতের অংশ বলে মনে করেন না? উত্তেজিত হওয়ার কথা বলছেন। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত।’

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের দিকে নরেন্দ্র মোদির ভারত যে হাত বাড়াতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মোদির প্রথম শাসনামলে দিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক পাকিস্তানি হাইকমিশনার আব্দুল বসিত। ভারতে থাকাকালীন সঙ্ঘ পরিবারের সাধারণ সম্পাদক তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা রাম মাধবের সঙ্গে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে তিনি মুখ খুলেছেন সে-দেশের সংবাদমাধ্যমে। বসিত বলেছিলেন, ‘ওই সময় রাম মাধব আমায় বলেছিলেন,  ৩৭০ অনুচ্ছেদ তো যে-কোনও দিন বাতিল করবে সরকার। আমাদের লক্ষ্য হলো, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরকে সঙ্গে একীভূত করা।’

ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারত ওই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছিলেন ওই পাকিস্তানি দূত।

মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গটি আরও উসকে দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা জম্মু-কাশ্মিরের এমপি জিতেন্দ্র সিংহ। নরসিংহ রাওয়ের সরকারের আমলে পুনর্দখল প্রশ্নে একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে জিতেন্দ্র বলেন, ‘আর একটি সমস্যাই বাকি রয়ে গেল। তা হলো, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির। কী করে তা ফেরত আনা যায়, এখন তা ভাবতে হবে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বিষয়টি দেখার জন্য।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের মতে, ভারতের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের দখল নেওয়া প্রয়োজন। কারণ পাকিস্তানের অধিকাংশ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ও লঞ্চ প্যাডগুলি রয়েছে সেখানেই।

রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সমস্যার জন্য মঙ্গলবার জওহরলাল নেহরুকেই দায়ী করেছেন অমিত শাহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সেনাদের পাল্টা হামলায় যখন পাকিস্তানি হানাদারেরা পালিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় কারও সঙ্গে আলোচনা না-করেই একতরফা রেডিওর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন নেহরু। সমস্যাটিকে নিয়ে যান জাতিসংঘের কাছে। ওই সময় সেনাদের না-আটকালে আজ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির ভারতের অংশ হতো। কাশ্মির সমস্যাই তৈরি হতো না।’

ভারতীয় মন্ত্রীরা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করার কথা বললেও দেশটির বিরোধিরা বলছেন, খুব শিগগিরই এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ হয়ত নেবে না মোদি সরকার। এক বিরোধী বলেছেন, ‘অন্তত ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কিছু হবে বলে মনে হয় না।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।