মুসলমান কন্যাকে কুমারী পূজা কলকাতায়

দুর্গাপূজার অষ্টমীতে এক অভূতপূর্ব কুমারী পূজার আয়োজন করেছেন কলকাতার একটি পরিবার। তুমুল সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার সময়ে এক মুসলিম কন্যাকে কুমারী রূপে পূজা করেছেন কলকাতার বাগুইআটির অর্জুনপুরের দত্তবাড়ি। চার বছরের মুসলমান কন্যা ফাতেমাকে ‘কালিকা’ রূপে সিংহাসনে বসিয়ে আরাধনা ও পূজার্চনা করেন দত্তবাড়ির বধূ মৌসুমী দত্ত।

B2132BCA-6183-4229-B4F1-F74CC81A88E5_w1023_r1_s

দুর্গাপূজার তিন দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অষ্টমী, যাকে মহাষ্টমীও বলা হয়। নারীশক্তির মহিমা প্রচারের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১ সালের এই দিনে রামকৃষ্ণ মিশনের বেলুড় মঠে দেবী দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে কুমারী পুজোর প্রবর্তন করেছিলেন। তবে এর তিন বছর আগে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পুজো করেন কাশ্মিরে গিয়ে এক মুসলমান শিকারা চালকের মেয়েকে দেখে তার দেবী বলে মনে হয়েছিল বলে। এখন বেলুড় মঠসহ আর যেখানেই কুমারী বা কন্যা পুজো হয়, সেখানেই বেছে নেওয়া হয় চার থেকে ছয় বছরের হিন্দু ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়েকে।

কিন্তু মৌসুমী ও তমাল দত্ত তাদের সহকর্মী মোহম্মদ ইব্রাহিমের ভাইঝি চার বছরের ফাতিমাকে কুমারী পূজা করেছেন। এই দম্পতি জানান, দুর্গা তো মা, মায়ের কোনও জাত আছে নাকি? আজকের দিনে জাতপাত আর ধর্ম নিয়ে যে সঙ্কীর্ণতা চলছে আসল ধর্ম যে এর ঊর্ধ্বে, সেটা বোঝানোর জন্যই আমরা এক মুসলমান কন্যার পূজা করেছি।

কুমারী পূজার জন্য মেয়েকে দেওয়ার জন্য ফাতিমার বাবা-মায়ের উদারতারও প্রশংসা করেন দত্ত দম্পতি।

এর আগে পেশায় আইনজীবী মৌসুমী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, তাদের পূজার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। ২০১২ সালে পাড়ার থিম পূজায় কৃষ্ণনগর থেকে দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেই প্রতিমায় পূজা করতে আপত্তি জানান পাড়া প্রতিবেশীরা। কথা কাটাকাটির মাঝে তখন সেই প্রতিমা বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তার পরের বছর থেকে দত্ত বাড়িতে শুরু হয় তন্ত্রমতে দুর্গাপূজা।

মৌসুমী আরও বলেন, ২০১২ সালে মহালয়ার আগের দিন আমি মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পাই। তিনি প্রবেশ করতে চান আমার বাড়িতে। আমার গুরুজিও বলেন পূজা করার কথা। তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই, দুর্গাপূজার মতো এত বড় পূজা বাড়িতে করব কেমন করে? পাঁচদিন ধরে মাকে সেবা দেওয়া মুখের কথা নাকি! কিন্তু অবশেষে ঠাকুরের ইচ্ছায় সেইবছরই শুরু হয় দত্তবাড়ির পূজা।

মৌসুমী দেবী আরও জানান, প্রথম থেকেই দত্তবাড়িতে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। সেবছর এক ব্রাহ্মণকন্যাকে পূজা করি, তার পরের বছর অব্রাক্ষণ বাড়ির মেয়ে, ২০১৪ সালে ডোম পরিবারের এক শিশু কন্যা, আর গতবছর ফের একবার এক ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়েকে কুমারী হিসাবে পূজা করি। বাড়ির সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসি যে দুর্গাপূজায় কোনো জাতপাতের ভেদাভেদ রাখব না আমরা। সেইমতো এবছর আমরা মুসলিম শিশুকন্যাকে পূজা করার সিদ্ধান্ত নেই।