বিশ্বের ১৭ দেশে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত

করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন ছড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য দেশেও। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ধরনটি শনাক্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে যেভাবে এই নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাতে যথেষ্ট উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ভারতে বি.‌১.‌৬১৭ করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে। জিআইএসএআইডি ডেটা বেস থেকে দেখা যাচ্ছে, করোনার এরইমধ্যে এটি ‌বিশ্বের ১৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

এই ভ্যারিয়েন্টে এক হাজার ২০০–এরও বেশি শনাক্তের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ সিকোয়েন্সই ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে ডেটাবেজে আপলোড করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নতুন এই করোনাভাইরাসের চরিত্রটি আগের ভাইরাসের চরিত্র থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি আগের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম। খুবই মারাত্মক। এর কার্যক্ষমতা এতোটাই বেশি যে এটি ভ্যাকসিনকেও অকার্যকর করে দিতে পারে।

যেভাবে ভারতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে, তাতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থার তরফে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনটি অন্যান্য স্ট্রেইনের চেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে ও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভারতে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়ানোর কারণ হচ্ছে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টও সমানভাবে সক্রিয় রয়েছে। সেগুলোও দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

ডব্লিউএইচও-এর পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট, গতবার ভারতে যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, এবার তার থেকে কম সময়ে আরও বেশি হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে।

বেশি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট, কম টিকাদান আর বড় জমায়েতের কারণে ভারতের করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নিয়েছে বলে মনে করে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি বলছে, এসব কারণের সঙ্গে ভারতের মানুষের অপ্রয়োজনে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস-এর হিসাব অনুযায়ী, ভারতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ চার হাজার ৮১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অক্সিজেন সরবরাহ আর শয্যা না থাকায় রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে দেশটির হাসপাতালগুলো। মরদেহের চাপ বাড়তে থাকায় ভারতের শ্মশানগুলোতে নির্মাণ করা হচ্ছে অতিরিক্ত চিতা। করোনা মোকাবিলায় ভারতকে জরুরি সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহ করছে ডব্লিউএইচও। চার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ এসব সামগ্রী ভারতে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক।

ডব্লিউএইচও মুখপাত্র জানান করোনায় আক্রান্ত ১৫ শতাংশেরও কম মানুষের হাসপাতালের সেবার দরকার পড়ে আর তার চেয়েও কম মানুষের দরকার হয় অক্সিজেনের। তিনি বলেন, বর্তমানে সমস্যার বড় একটি কারণ হলো বহু মানুষ অপ্রয়োজনে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছেন, যদিও বাড়িতেই খুব নিরাপদে তাদের সেবা দেওয়া সম্ভব।

ডব্লিউএইচও মুখপাত্র বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীকে বাড়িতে রেখেই নিরাপদে পরামর্শ দেওয়া সম্ভব। এছাড়া হটলাইন কিংবা ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত তথ্য সবাইকে জানানো যেতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।