মানুষের সঙ্গে সংঘাতে বিপন্ন বন্য হাতির প্রাণ, উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা

বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ ভারত। এখানে বন্য হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাতের ঘটনা যেন নিয়মিত। ভারতে সাধারণ মানুষ ও বন্য হাতির মধ্যে প্রতি বছর সংঘাতের চিত্র যেন ক্রমেই বাড়ছে। এতে বছরে পাঁচশ হাতি মারা পড়ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে অনেকে। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সরকারের কার্যকরী পদেক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ভারতের বুনো হাতি। এই বন্য হাতির আক্রমণাত্মক আচরণের কারণে সমস্যা দিন দিন আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এর পেছনে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ফর ওয়াইল্ডলাইফ স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ও বিজ্ঞানী ক্রিথি কারান্থ মনে করেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হল আমাদের বন্য প্রাণীর জন্য মাত্র ৫ শতাংশের কম জমি রয়েছে। ওইসব বনাঞ্চলের আশাপাশেই আবার লাখ লাখ মানুষ বসবাস করে আসছেন’। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতজুড়ে শতাধিক জাতীয় উদ্যান রয়েছে। যদিও সংরক্ষিত জায়গা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়। ভারতে ৩০ হাজারের মতো বন্য হাতি বনের বাইরে থাকছে। প্রাণিগুলো খাবারের খোঁজে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আর তখনই মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি হচ্ছে’।

একটি ১০ ফুট উচ্চতার হাতি দৈনিক গড়ে ১৫০ কেজি খাবার খেয়ে থাকে। বেশির ভাগই ঘাস, লতা-পাতা এবং বাকল হয়ে কাটায়। তবে তাদের পছন্দের তালিকায় কলা, চাল অথবা আখ জাতীয় কিছু হতে পারে।

বিজ্ঞানী ক্রিথি কারান্থ জানান, ‘দিনে দিনে বনের আয়তন সংকুচিত হয়ে আসছে। হাতিরা খাবারের সন্ধানে রাতে লোকলয়ে প্রবেশ করলে হামলার শিকার হয়। এ ধরনের ঘটনায় আমরা অনেক হাতির মৃত্যুর প্রমাণ পেয়েছি’।

এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারতেই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হাতির মৃত্যুর পেছনে মানুষের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান ভারতের এলিফ্যান্ট বিশেষজ্ঞ দলের সন্দীপ কুমার তিওয়ারি।

তিওয়ারি বলেন, বছরে হাতির সংঙ্গে অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষে প্রায় পাঁচ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্য হাতির দল বহু জমির ফসল নষ্ট করে আসছে। এখানে ৮০ থেকে ১০০ হাতির মৃত্যুর সঙ্গে মানুষের সম্পকৃক্ততা পেয়েছি। কিছু হাতি বৈদ্যুতিক শক এবং বিষ দিয়ে হত্যা করা হয়, কিছু ট্রেনের কাটা পড়ে মারা যায়।

বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ভারত সরকার ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। যদিও এটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পিছয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কারান্থ।

মানুষের সম্পত্তি বিনষ্ট এবং হাতির প্রাণ হারানোর ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয় বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তিওয়ারি। ভারতের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং তিওয়ারির সংগঠন ১০১ টি করিডোর চিহ্নিত করেছে। বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় বেশ কয়েকটি পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।