নুপুর-ক্ষত মেটাতেই মোদির আমিরাত সফর: আনন্দবাজার

মহানবী (সা.)-কে নিয়ে বিজেপির বহিষ্কৃত নারী মুখপাত্র নুপুর শর্মার অপমানজনক মন্তব্যের জেরে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষত মেটাতেই মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খালিফা আল নাহিয়ান-এর প্রয়াণের পরেই উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুকে দেশটিতে পাঠানো হয়েছিল ভারত সরকারের তরফ থেকে শোক জানাতে। একই সঙ্গে প্রোটোকলের প্রশ্নে কিছুটা অভূতপূর্বভাবেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর হাজির হন নয়াদিল্লিতে আমিরাতের দূতাবাসে। উদ্দেশ্য একই— আবুধাবির পাশে দাঁড়িয়ে সৌহার্দ্যের প্রদর্শন।

কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই জোড়া শোকবার্তার পরেও জি-৭ এর তিন দিনের লাগাতার বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মিউনিখ থেকে আবুধাবি পৌঁছনো (সেই একই কারণে) খুব জরুরি ছিল না। কিন্তু আবুধাবির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পশ্চিম এশিয়ার সব ক’টি দেশের থেকে অনেকটাই বেশি কাজের এবং গভীর। প্রধানমন্ত্রীর ঝটিতি সফরই শুধু নয়, বিজেপি সাবেক নেতাদের মহানবী (সা.) সংক্রান্ত মন্তব্যের জেরে যে ক্ষত হয়েছে, তা পূরণ করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক সক্রিয় কূটনীতিতে জড়াবে ভারত, এমনটাই খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে। পাশাপাশি এটাও মনে করা হচ্ছে, অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে এই একই কাজ কিন্তু কঠিনতর হবে।

মাত্র চার মাস আগেই একটি ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে দু’টি দেশ সিইপিএ (কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ) চুক্তিতে সই করে। এই চুক্তির ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬ হাজার কোটি ডলার থেকে বেড়ে পাঁচ বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে— এমনটাই জানাচ্ছে দু’দেশের সরকারপক্ষ। সব চেয়ে বড় কথা, এই চুক্তির ফলে ভারতের রফতানির পরিধি এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গেছে। মূল্যবান পাথর ও গহনা থেকে জামা কাপড়, জুতো থেকে ওষুধ ক্ষেত্রে ভারতের রফতানি ইতোমধ্যে অনেকটা বেড়েছে।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত ও আমিরাতের ঘনিষ্ঠতা শুধু বাণিজ্যের অঙ্কে মাপলে ভুল হবে। ইসলামিক বিশ্বের কাছে পৌঁছতে বিজেপি সরকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাও আবুধাবি দিয়েছে।

সম্প্রতি সে দেশের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে গভীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হলেন মোদি। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি বৈঠকে প্রথমবারের জন্য কোনও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে (প্রয়াত সুষমা স্বরাজ) আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরে জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্কের মধ্যে আগাগোড়া মোদি সরকারের পাশে ছিল এই আবুধাবি-ই।

সব মিলিয়ে আরব বিশ্বে মোদির এমন বন্ধু আর নেই। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, সেখানকার বিমানবন্দরে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে গভীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হওয়ার ছবিটি, মহানবী (সা.) বিতর্কের পরে অবশ্যই একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। কিন্তু শুধু আবুধাবিতেই নয়, অন্য আরব দেশগুলোতে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কাজটি যে আরও কঠিন হবে, তা ঘরোয়াভাবে স্বীকার করছে সাউথ ব্লক।