গরু পাচারকাণ্ডে মাসে ২ কোটি রুপি পেতেন অনুব্রত

পশ্চিমবঙ্গের গরু পাচার মামলায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেলো ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। গরু পাচারের জন্য প্রতি মাসে প্রটেকশন মানি হিসেবে অনুব্রত মণ্ডল ২ কোটি রুপি নিতেন! এই মামলায় বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের বাহুবলী নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই।

গরু পাচারের অভিযোগ উঠেছে আগেও। তবে এবার সেই মামলায় সবাইকে ধরতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রথমে ইডি'র হাতে গ্রেফতার হন এনামুল হক। এর মাস দুয়েক আগে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গরু পাচার সংক্রান্ত বিভিন্ন সূত্রের হদিস পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এবার সেই মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে।

সিবিআই সূত্রে খবর, এনামুল আর সায়গলের বক্তব্য মিল পাওয়া গেছে। অনুব্রতর সঙ্গে যে অর্থ সংক্রান্ত ‘ডিল’ হতো, সেই তথ্য এসেছে সিবিআই’র হাতে। গত ফেব্রুয়ারিতে গরু পাচার মামলায় এনামুল হককে গ্রেফতার করে ইডি। ইডি হেফাজত শেষ হওয়ার পর বর্তমানে দিল্লির তিহার জেলে রয়েছেন এনামুল। জেলে রয়েছেন অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গলও। তাদের জেরা করে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে চলে গরু পাচার কর্মকাণ্ড। ওই সময় থেকেই পাচারের ব্যবসা শুরু করেছিলেন এনামুল। তদন্ত সংস্থার দাবি, এনামুল হকের সঙ্গেই চুক্তি হতো অনুব্রত মণ্ডলের। ফোনে কথা হতো দুজনের।

সিবিআই জেরায় এনামুল জানিয়েছেন, পাচার করতে গেলে ‘প্রটেকশন মানি’ দিতে হতো তাকে। তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, তিন মাসে ৬ কোটি রুপির লেনদেন হতো। সায়গলকে অর্থ দিতেন এনামুল। আর সায়গল দিতেন অনুব্রতকে। তার থেকে ভাগ পেতেন সায়গলও।

এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনুব্রতকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, পাচারের অর্থ সংক্রান্ত জেরা করা হবে অনুব্রতকে। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতারের পর রাতে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে তৃণমূল নেতাকে। সিবিআই হেফাজতে নিজাম প্যালেসেই রয়েছেন তিনি। শুক্রবার তাকে জেরা করার কথা রয়েছে। গরু পাচারের টাকা কোথায় যেতো, কারা পেতেন সেই টাকা? গোয়েন্দাদের প্রশ্নপত্রে এসব থাকবে বলে জানা যাচ্ছে। এতদিন ধরে ৯ বার তলব করা হলেও মাত্র একবার হাজিরা দিয়েছিলেন অনুব্রত। এবার হেফাজতে নিয়ে অনুব্রতকে জেরা করে পাচার মামলার শিকড় খোঁজার চেষ্টা করবে সিবিআই।

সূত্রের খবর, প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে মসৃণভাবে গরু পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে এনামুল। আরও জানা গেছে, পাচারের ‘ডে টু ডে’ অপারেশন দেখভাল করতো অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন। তাকে জেরা করেই অনুব্রত মণ্ডলের নামে-বেনামে একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

অনুব্রতর পরিবারের লোকদের নামেও সম্পত্তি মিলেছে। কোন পথে টাকা আসতো, সেই টাকা কোথায় বিনিয়োগ হতো এবং এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সিবিআই।

বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪৫ মিনিটে দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘণ্টা যাত্রার পর আসানসোল আদালত থেকে কলকাতায় সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে পৌঁছান অনুব্রত। দৃশ্যত তার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ছিল। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রাতে নিজাম প্যালেসে ঢুকে ‘ফ্রেশ’ হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন। ১৪ তলায় কর্মকর্তাদের একটি ঘরে রাখা হয়েছে অনুব্রতকে। রাতে খাবার খাননি তিনি। সকাল ৯টা পর্যন্ত খবর, তখনও তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চা বিস্কুট খান তিনি। এরপরেই তাকে সিবিআই কর্মকর্তারা ম্যারাথন জেরা শুরু করেছেন।