কাতারের সঙ্গে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক বিনিময়ের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল সানির মধ্যে স্বাক্ষরিত একাধিক চুক্তির মাধ্যমে অন্তত ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘অর্থনৈতিক বিনিময়’ হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে কাতার এয়ারওয়েজ ও মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের মধ্যে ৯৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় সর্বোচ্চ ২১০টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ও ৭৭৭এক্স বিমান কিনবে কাতার।

চুক্তি সাক্ষরের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এটা বোয়িংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ অর্ডার, বোয়িংয়ের জন্য এটি রেকর্ড। কেলি (অর্টবার্গ), অভিনন্দন।

ট্রাম্প আরও জানান, চুক্তির মোট মূল্য ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও ১৬০টি উড়োজাহাজের জন্য মূল অর্ডারের পরিমাণ এটি।

এছাড়া কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা ও সমুদ্র নিরাপত্তা সুবিধার উন্নয়নে সম্ভাব্য ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের লক্ষ্যে একটি ইচ্ছাপত্রও স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। কাতার যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রতিরক্ষা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এবং এই চুক্তির মাধ্যমে তারা জেনারেল অ্যাটমিকসের ড্রোন ও রেথিয়নের অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম কিনবে।

তবে বোয়িং বা কাতার এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে এসব চুক্তির নির্দিষ্ট মডেল বা অর্ডারের ধরনসম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনও মন্তব্য আসেনি।

কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবও বহন করছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হিসেবে কাতারের ভূমিকা গত কয়েক বছরে বহুমাত্রিক রূপ নিয়েছে।

গাজা যুদ্ধ  চলাকালে হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে কাতার। ইরানের সঙ্গেও কাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, যা ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে কখনও সুযোগ, কখনও উদ্বেগের বিষয়।

২০১৮ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালেবানের সঙ্গে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের যে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছিল, সেটিও কাতারেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

ট্রাম্পের এই সফরের পেছনে কেবল কৌশলগত উদ্দেশ্য নয়, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সম্পর্কও রয়েছে। দোহার উত্তরে বিলাসবহুল গলফ রিসোর্ট নির্মাণে কাতারের সঙ্গে ট্রাম্প পরিবারের অংশীদারত্ব রয়েছে। এমনকি ট্রাম্পের মনোনীত অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিও এক সময় কাতারের নিবন্ধিত লবিস্ট ছিলেন।

সম্প্রতি কাতার ট্রাম্পকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাসবহুল বিমান উপহার দিতে চাচ্ছে বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, যা সম্ভাব্য আইনগত, নৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

সব মিলিয়ে ট্রাম্পের এই স্বল্প সময়ের দোহা সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থের এক জটিল মিশ্রণ তৈরি হয়েছে।