অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলির মুখে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব ও এশীয় কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের একটি প্রতিনিধি দল। বুধবার (২২ মে) জেনিন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের সময় তারা এ হামলার মুখে পড়েন। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এবং একাধিক দেশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
একটি আনুষ্ঠানিক মিশনে জেনিনে গিয়ে মানবিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছিলেন ওই কূটনীতিকরা। গত চার মাস ধরে ওই এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যাপক হামলা চলছে। ফলে বহু মানুষ নিহত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলটি পূর্বনির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়ে অনুমোদনহীন এলাকায় প্রবেশ করায় তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে ‘সতর্কতামূলক গুলি’ ছোড়ে সেনারা। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।
পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কমান্ডার নির্দেশ দিয়েছেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রতিনিধি দলের দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
আল জাজিরার রিপোর্টার হামদাহ সালহুত জানিয়েছেন, পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের জেনিন, তুলকারেম ও আশপাশের এলাকায় সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক ঘরছাড়া করা হয়েছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে যে কেউ ইসরায়েলি গুলির শিকার হতে পারেন।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন, তখন তাদের আশপাশে গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তারা দ্রুত আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে যান।
আল জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ দ্বারা যাচাইকৃত এক ভিডিওতে দেখা যায়, দুই ইসরায়েলি সেনা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং তাদের রাইফেল কূটনীতিকদের দিকে তাক করা।
একজন ত্রাণকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ওই সময় প্রায় ২০ জন কূটনীতিককে জেনিনের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুলি কোথা থেকে এসেছে তা নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়নি এবং কেউ আহত হয়নি।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর দ্বারা কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করার ঘটনাটিকে ‘জঘন্য অপরাধ’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলো নিজেদের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা ও এ ঘটনার ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটিকে ‘সবচেয়ে কঠোরভাবে’ নিন্দা জানিয়ে বলেছে, আঙ্কারা অবিলম্বে তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির দাবি জানাচ্ছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো এক্সে লিখেছেন, তিনি প্যারিসে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করবেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, ‘আমি স্তব্ধ ও ক্ষুব্ধ’। তিনি জানান, রামাল্লায় অবস্থানরত আয়ারল্যান্ডের দুই কূটনীতিক ওই দলে ছিলেন।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস জানিয়েছেন, মাদ্রিদেও ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চাই।’
আয়ারল্যান্ড ও স্পেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে সবচেয়ে শক্তিশালী ফিলিস্তিনপন্থি কণ্ঠস্বর। তারা গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের জনগণের দুর্ভোগের অবসান দাবি করেছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকার জানিয়েছে, তাদের ভাইস কনসালও ওই গুলির ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন এবং তারা ব্যাখ্যার দাবি জানিয়েছে। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে বলে জানানো হয়েছে।