উন্নয়নশীল দেশের সংগঠন ব্রিকসকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'আমেরিকা বিরোধী' তকমা এবং বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংগঠনটির একাধিক সদস্য। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে আয়োজিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার (৭ জুলাই) এই প্রতিবাদ জানানো হয়। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ব্রিকস আমেরিকা বিরোধী কোনও গোষ্ঠী নয় দাবি করে ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সংগঠনটির ভিত্তি হচ্ছে সাধারণ বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি (কমন ওয়ার্ল্ড ভিউ)। নির্দিষ্ট কোনও দেশের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেবে না।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির সমালোচনা করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, বল প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে শুল্ককে ব্যবহার করা উচিত নয়। সবাই যেন জয়ী হতে পারে, এমন সহযোগিতায় ব্রিকস বিশ্বাস করে। নির্দিষ্ট কোনও দেশের ওপর চড়াও হওয়া তাদের উদ্দেশ্য নয়।
এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের জবাবে ভারত ও ব্রাজিলের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বলেছেন, সম্মেলন শেষ হওয়ার পর তিনি আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দেবেন।
সম্মেলনের প্রথমদিন, রবিবার, জোটের অর্থমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিকে ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, এমন পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, ওই দিন রাতেই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ব্রিকস জোটের আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থি নীতির পক্ষে দাঁড়ানো দেশগুলোর ওপর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এ সিদ্ধান্ত থেকে কোনও দেশই ছাড় পাবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্রাজিলের এক কূটনীতিবিদ বলেছেন, বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ন্যায্য নীতিমালা ভোগ এবং সমঝোতার পথ তৈরি করা ব্রিকসের প্রধান উদ্দেশ্য। ট্রাম্পের হুমকিধামকিতে সে উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
ব্রিকসের একাধিক সদস্য এবং অংশীদার রাষ্ট্রই তাদের বাণিজ্যের জন্য প্রবলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। তাই, মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারিতে তাদের অস্বস্তিবোধ করার কারণ রয়েছে বৈকি।
গত বছর ব্রিকস দেশগুলো নিজেদের মুদ্রা চালুর ঘোষণা দিলে, ওভাল অফিসের মসনদে বসার আগেই ট্রাম্প তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এবার ব্রিকসের সমালোচনার জবাবেও কঠোর শুল্কনীতির হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, রাশিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল। সম্প্রতি এতে যোগ দিয়েছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশির প্রতিনিধিত্ব করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য ৯ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও এখন তা পিছিয়ে ১ আগস্ট কার্যকর করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে কেবল বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের স্টিল রফতানির শুল্ক ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ১ আগস্ট থেকেই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্পও বলেছেন, সোমবার ১০ থেকে ১৫টি দেশকে শুল্ক সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হবে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প একের পর এক আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন। তার দাবি, এতে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানা সুরক্ষিত থাকবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে।