সরাসরি আলোচনায় সিরিয়া ও ইসরায়েল

দীর্ঘ শত্রুতার ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরাসরি মুখোমুখি বৈঠক করেছে সিরিয়া ও ইসরায়েল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পাঁচটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে এই আলোচনা সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা কমানো এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানোর লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক দশকের বৈরিতা অতিক্রম করে এই সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি। যুক্তরাষ্ট্র নতুন সিরীয় ইসলামপন্থি শাসকদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহ দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র অনুযায়ী, সিরিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহমাদ আল-দালাতি, যিনি বর্তমানে কুনেইত্রা প্রদেশের গভর্নর এবং সম্প্রতি সুইদা প্রদেশের নিরাপত্তার দায়িত্বও পেয়েছেন। সুইদা হলো সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখা গেছে।

তিনটি সূত্র জানিয়েছে, এই সংলাপের একাধিক ধাপ হয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়, যার মধ্যে কিছু ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষে কারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুজন সূত্র জানিয়েছেন, তারা সম্ভবত নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা।

ইসরায়েল ও সিরিয়া সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

এই মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার মধ্যে সৌদি আরবের রিয়াদে এক বৈঠক হয়। এতে কয়েক দশকের মার্কিন-সিরিয়া নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। এ বৈঠকের পর ট্রাম্প জানান, শারার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে আগ্রহী, যদিও সেটি সময়সাপেক্ষ হবে।

একটি আঞ্চলিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এই উদ্যোগ ইসরায়েলের পূর্ববর্তী কৌশল—সিরিয়াকে দুর্বল ও খণ্ডিত রাখার পরিকল্পনায় একধরনের আঘাত হতে পারে।

বর্তমানে আলোচনাগুলো মূলত যৌথ নিরাপত্তা ইস্যু এবং সীমান্তে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ কমানো নিয়ে হলেও, দু’টি সূত্র জানিয়েছে, এটি ভবিষ্যতে বৃহত্তর রাজনৈতিক সমঝোতার পথ তৈরি করতে পারে।

শারার অবশ্য প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনও ঘোষণা দেননি। তবে তিনি ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা গোলান মালভূমিতে জাতিসংঘের একটি বাফার জোন সৃষ্টি করেছিল।

নতুন সিরীয় প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি হুমকি নয়—এই বার্তা স্পষ্ট করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা দামেস্ক ও বিদেশে ইহুদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের দুই সিনিয়র নেতাকে আটক করেছে, যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় অংশ নিয়েছিল।

এছাড়া সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, আমরা কখনোই সিরিয়াকে এমন কোনও পক্ষের জন্য হুমকির উৎস হতে দেব না, যার মধ্যে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত।

সদ্য, সিরিয়া ইসরায়েলের সাবেক গুপ্তচর এলি কোহেনের কিছু পুরনো ব্যক্তিগত সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছে।