গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে গুলি, যুদ্ধাপরাধের তদন্তে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী

গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিবর্ষণ নিয়ে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি দৈনিক পত্রিকা হারেৎজ শুক্রবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল দফতর এই তদন্ত শুরু করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

গত এক মাসে গাজা উপত্যকার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারি কর্মকর্তারা।

হারেৎজ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ইসরায়েলি সেনা দাবি করেছেন, তাদের ভিড় সরাতে প্রয়োজনে গুলি চালাতে বলা হয়েছিল। এমনকি যেসব ফিলিস্তিনি কোনও হুমকি ছিলেন না, তাদের ওপরও অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়েছিল।

রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক কোনও সাড়া দেয়নি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তবে হারেৎজ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সাধারণ জনগণের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছে এবং বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনায় সেনাবাহিনী অভ্যন্তরীণ তদন্ত পরিচালনা করেছে এবং নতুন নির্দেশনা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর পর্যালোচনার জন্য গঠিত সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটকে সাম্প্রতিক এই গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলো তদন্তে নিযুক্ত করা হয়েছে। এই ইউনিট গত এক মাসে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে সেনাবাহিনীর আচরণ পর্যালোচনা করছে।

ইসরায়েলের প্রায় দুই বছরব্যাপী সামরিক অভিযানে গাজার অবকাঠামোর বড় অংশ ধ্বংস হয়েছে এবং উপত্যকার ২৩ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাবার ও জরুরি পণ্যের ভয়াবহ ঘাটতির মধ্যে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ সংগ্রহের আশায় জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন বিতরণকেন্দ্রে।

তবে এসব এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই গুলিবর্ষণ ও প্রাণহানির খবর আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র এবং জাতিসংঘের খাদ্যসামগ্রী বহনকারী ট্রাকের যাত্রাপথে ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় খাদ্য নিতে আসা মানুষের ওপর গুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাকর্মীরা।

হারেৎজ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাদের অভিযোগ, সেনা কমান্ডাররা সরাসরি ভিড়ের দিকে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে ওই এলাকাগুলো খালি করা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) যেসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন দাবি করেছিল, সেগুলোর আইনি ব্যাখ্যা সামরিক আইনজীবীরা একান্ত বৈঠকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ত্রাণ বিতরণে প্রবেশাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্তি চলছে। সেনাবাহিনী এক সময় জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোতে যাওয়ার পথগুলোতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছিল। কিন্তু খাদ্য পেতে হলে স্থানীয়দের মধ্যরাতের আগেই বের হতে হয়, কারণ সকালেই হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে পড়েন কেন্দ্রে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসের হামলায়  ১ হাজার  ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন, যার বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।

জবাবে ইসরায়েল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায় গাজাজুড়ে ৭২ জন নিহত ও ১৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।