রুশ বাহিনীর সমালোচনায় পুতিনের মিত্র কাদিরভ

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পারফরম্যান্সের সমালোচনা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি থেকে রুশ বাহিনীর পিছু হটার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

পূর্ব ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ছিল খারকিভ প্রদেশের ইজিউম শহরে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর অভিযানের মুখে গত ১০ সেপ্টেম্বর গোলাবারুদের মজুদ এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায় কয়েক হাজার রুশ সেনা। এই ঘটনায় রুশ বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রমজান কাদিরভ।

১০ সেপ্টেম্বর মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে এ নিয়ে কথা বলেন প্রভাবশালী এই চেচেন রাজনীতিক। দীর্ঘ ১১ মিনিটের ভয়েস মেসেজে তিনি পরিকল্পনা অনুযায়ী রুশ বাহিনীর অগ্রসর হতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করেন।

রমজান কাদিরভ বলেন, ‘আজ বা কাল যদি বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা না হয়, তাহলে আমি দেশের নেতৃত্বের কাছে যেতে বাধ্য হবো, যাতে তাদের কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো কৌশলবিদ নই। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে, ভুলগুলো হয়েছে। আমি মনে করি তারা কয়েকটি উপসংহার টানবে।’

এই রাজনীতিক বলেন, ‘সেখানে আমাদের লোকজন রয়েছে। যোদ্ধারা এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত। আরও ১০ হাজার যোদ্ধা তাদের সঙ্গে যোগ দিতে প্রস্তুত। নিকট ভবিষ্যতে আমরা ওডেসা পৌঁছাবো।’

পূর্ব ইউক্রেনে পরাজয়ের বিষয়ে মস্কোর প্রায় সম্পূর্ণ নীরবতা, ঘাঁটিতে গোলাবারুদ রেখে রুশ বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনার কোনও সরকারি ব্যাখ্যা না দেওয়া রুশ জাতীয়তাবাদীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

খারকিভে লজ্জাজনক পরাজয়ের বিষয়টি সামনে আসার পর রবিবার অঞ্চলটিতে ইউক্রেনের বিভিন্ন অবস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানায় মস্কো।

কিয়েভ থেকে আল জাজিরার গ্যাব্রিয়েল এলিজোন্ডো জানান, বহু রুশপন্থী টেলিগ্রাম চ্যানেলে গোলাবারুদের মজুদ ফেলে রেখে ইজিউম শহরের ঘাঁটি থেকে রুশ বাহিনীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে মস্কোর জন্য পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু কেউই রবিবার পর্যন্ত এই পরাজয়ের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। দৃশ্যত এ ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছে মস্কো।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, খারকিভ প্রদেশের ইজিউম শহর থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটা মার্চে কিয়েভ থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর এই যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় পরাজয়। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে এই পিছু হটা একটি নির্ণায়ক মোড় ঘুরানো ঘটনা হয়ে ওঠতে পারে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাসের ডনেস্ক ও লুহানস্কে আক্রমণে ইজিউমকে নিজেদের রশদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল রাশিয়া। এখান থেকে আক্রমণ চালিয়ে আসছিল তারা। এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া সেনাবাহিনী তাদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতার প্রদর্শন করেছে, তারা পিছু হটেছে। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ার কাছ থেকে দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ইজিউম মুক্ত করার ঘোষণা দেননি। কিন্তু জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক একটি ছবি টুইটারে প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করে তারা বিশ্বের দ্রুততম বাহিনী! দৌড়াতে থাকো!