যুক্তরাজ্যে 'স্পাউজ ভিসা' ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপের হুমকি

family-migration-protest-MRNস্পাউজ ভিসার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশিত সংশোধনী বাস্তবায়নে যুক্তরাজ্য সরকার যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের কারণে অনেকে অভিবাসী তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে যুক্তরাজ্য নিতে পারছেন না। ফলে সন্তানদেরও যুক্তরাজ্যে নিতে পারছেন না এসব অভিবাসীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, সরকার  শিশুদের জন্য আইনটি শিথিল করতে আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না।

যুক্তরাজ্যের প্রচলিত ভিসা পদ্ধতি অনুসারে, স্পাউজ ভিসার ক্ষেত্রে, অর্থাৎ অভিবাসীদের নিজের দেশ থেকে স্ত্রী বা স্বামীকে যুক্তরাজ্যে আনতে হলে বার্ষিক ন্যূনতম ১৮ হাজার ৬শ পাউন্ড আয় করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর জন্যই কেবল এই আইন প্রযোজ্য। ফলে বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে যারা স্বামী বা স্ত্রীকে যুক্তরাজ্য নিয়ে আসতে চান, তাদের এই শর্ত মানতে হয়। সন্তানকে যুক্তরাজ্যে আনতে গেলে এই খরচ আরও বেড়ে যায়। এক সন্তানসহ স্ত্রীকে আনতে এই খরচের পরিমাণ ২২ হাজার ৪শ পাউন্ড। একের বেশি সন্তানের ক্ষেত্রে প্রতিজনের জন্য খরচ আরও বাড়বে ২ হাজার ৪শ পাউন্ড করে।

ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থ যেন অভিবাসীর স্ত্রী বা স্বামীর পেছনে খরচ করতে না হয়, সেজন্য ২০১২ সালে এই আইন চালু করে যুক্তরাজ্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট আইনটিকে ব্যাপক অর্থে বৈধ বলে রায় দেন। কিন্তু একটি ব্যতিক্রমী ধারা রাখার নির্দেশও দেন আদালত। তাতে বলা হয়, কোনও শিশু যদি এই আইনের ফলে পিতা-মাতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বলে মনে হয়, তখন ন্যূনতম আয়ের শর্ত শিথিল করার বিধান রাখতে হবে।

এই আইনের বিরোধিতাকারীরা অভিযোগ করছেন, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনটি সংশোধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চলতি মাসের শুরুতে এই আইনের সংশোধন জারি করে এক বিবৃতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে অনেক কিছু স্পষ্ট নয় বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্র্যান্টসের (জেসিডব্লিউআই) আইন পরিচালক চাই প্যাটেল বলেন, ‘আমাদের গবেষণার ফল সুপ্রিম কোর্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, দীর্ঘ মেয়াদে পিতামাতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়ে। নতুন জারি করা আইনটি স্পষ্ট করে লিখিত নয়। সরকার এই নির্দেশনা মানবে কিনা এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে, তা জানাচ্ছে না।’

চাই প্যাটেল আরও বলেন, ‘জেসিডব্লিউআই নতুন আইনের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করবে। পুরো আগস্ট মাস দেখার পর যদি কোনও অন্যায্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনি পদক্ষেপ নিতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সংশোধন ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এতে করে স্পাউজ ভিসার ক্ষেত্রে অন্য উৎসের ওপর নির্ভর করা যাবে। নির্দিষ্ট ও বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি অর্থও কাজে লাগানো যাবে।

ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের এই আইনে কতগুলো পরিবারে প্রভাব পড়বে তা স্পষ্ট নয়। অনেক বাংলাদেশি পরিবারও এই আইনের ফলে স্ত্রী/স্বামীকে যুক্তরাজ্য নিয়ে আসতে পারছেন না।

এই আইনের বিরোধিতা করে দুই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত দম্পতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আব্দুল মজিদ তার স্ত্রী ও শাবানা জাবেদ তার স্বামীকে যুক্তরাজ্যে আনতে পারছিলেন না। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এক লেবানিজ শরণার্থী। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার পরও তিনি যুক্তরাজ্যে কোনও ভালো চাকরি পাচ্ছিলেন না। ফলে তিনি স্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে আনতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। এই তিন ব্যক্তির সঙ্গে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর আরেক শরণার্থীও আদালতের দ্বারস্থ হন। তিনিও স্ত্রীকে নিয়ে আসতে পারছিলেন না ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের বিধানের কারণে।

বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন। ২০১৫ সালে এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের এই বিধানটি অনেক পরিবারকে ‘স্কাইপি পরিবারে’ রূপান্তরিত করছে। কারণ যুক্তরাজ্যে পরিবার ও সন্তানদের আনতে না পারায় শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছিলেন অনেক অভিবাসী।

‘ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ন্যূনতম বার্ষিক আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি ও বৈষম্যমূলক। যেসব ব্রিটিশ নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে বাস ও কাজ করেছেন এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তারা এই আইনের শিকার হয়েছেন এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে আসা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট অভিবাসী পরিবারের জন্য ন্যূনতম আয়ের বিধানটির স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে করদাতাদের বোঝা কমানো ও আমাদের সমাজে অভিবাসী পরিবারের থিতু হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে একটি অভিবাসন প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে এটিই মূল বিষয়।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, অভিবাসন আইনের সংশোধন চলমান নীতিকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু আদালত যে বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, শিশুর বৃহত্তর কল্যাণে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের দায়িত্ব।

/এএ/এমপি/