যুক্তরাজ্যে বলপূর্বক দেওয়া বিয়ে প্রতিরোধে অভিনব প্রচারণা

বলপূর্বক দেওয়া বিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন নারী অভিনব প্রচারণা চালাচ্ছেন যুক্তরাজ্যে। স্কুল ছাত্রী থাকা অবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে গিয়েছিলেন। বলপূর্বক দেওয়া বিয়ে প্রতিরোধে তিনি অন্তর্বাসে চামচ লুকিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি নিজেও একসময় বলপূর্বক দেওয়া বিয়ের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, ‘মেয়েরা যদি অন্তর্বাসে একটি চামচ লুকিয়ে নিয়ে যায় তাহলে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা কথা বলার বেশি সুযোগ পাবে। এটা একটা চমৎকার কৌশল হতে পারে। বাধ্য করা অন্যায়, কথা শেষ। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে শিশুরা যেন সেটা বোঝে; কেউ যেন তাদেরকে ধর্মের দোহাই দিতে না পারে।’NINTCHDBPICT000420183174

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেবামূলক সংস্থা কারমা নিরভানা উত্তর ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের চামচ দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে, যাতে আগামী গ্রীষ্মের সময়টাতে তারা তাদের অন্তর্বাসের ভেতর চামচ লুকিয়ে রাখে। গ্রীষ্মের সময়েই বেশিরভাগ পরিবার ছুটি কাটাতে যাওয়ার নামে শিশুদের বলপূর্বক বিয়ে দিতে যুক্তরাজ্যের বাইরে নিয়ে যায়।

বলপূর্বক দেওয়া বিয়ের একজন ভুক্তভোগী জাসভিন্দার সাঙ্ঘেরা। ২৫ বছর আগে মতের বিরুদ্ধে দেওয়া বিয়ে প্রতিরোধে তিনি সংস্থাটি স্থাপন করেছিলেন। তার ভাষ্য, ‘গ্রীষ্মের ছুটির সময়টা অভিভাবকদের জন্য একটা বড় সুযোগ। এ সময় তারা তাদের শিশুদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে। কারণ স্কুলগুলো গ্রীষ্মের ছুটিতে তাদের শিক্ষার্থীরা কোথায় আছে সে খোঁজ রাখে না।’

যুক্তরাজ্য সরকারের বলপূর্বক দেওয়া বিয়ে প্রতিরোধে কাজ করা সংস্থা এফএমইউ জানিয়েছে, গত বছর যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের বলপূর্বক বিয়ের দেওয়ার ঘটনায় জড়িত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান (৪৩৯ জন), বাংলাদেশ (১২৯ জন), সোমালিয়া (৯১ জন) এবং ভারত (৮২ জন)।

এফএমইউয়ের যুগ্ম-প্রধান ডেভিড মেয়ার বলেছেন, ‘বিমানবন্দরে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধ করতে পারাটা আমাদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য। শিশুদের সঙ্গে কথা বলে এবং সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে তা করা যেতে পারে। আমরা জানাতে চাই, তাদেরকে সাহায্য করার ব্যবস্থা আছে।’

২০১৪ সালে বলপূর্বক দেওয়া বিয়েকে অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে যুক্তরাজ্যে আইন পাস হয়েছে। অভিভাবক বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্য যদি কোনও শিশুকে বিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করে তাহলে তার সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।