ব্রেক্সিট চুক্তির সংসদীয় ভোট পিছিয়ে যেতে পারে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তি পাসের জন্য নির্ধারিত সংসদীয় ভোটের সময় সময় পিছিয়ে দিতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে আজ তার একটি ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছে, ব্রেক্সিট চুক্তির ওপর অনুষ্ঠিতব্য ভোট নিশ্চিতভাবেই স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এতদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর থেকে ভোট নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাই বলা হচ্ছিল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি উল্লেখ করেছে, সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত হলে ব্রেক্সিট চুক্তিটি পাস না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। খোদ মের দলের সংসদ সদস্যরাই এর বিরুদ্ধে।2018-12-10T130928Z_1123298284_RC1DF4AA8810_RTRMADP_3_BRITAIN-EU

ব্রিটিশদের মধ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে রয়েছে প্রবল ভিন্নমত। জরিপে ব্রেক্সিট গণভোট পরবর্তী সময়ে দেশটির জনগণের মনোভাব পাল্টে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে তেমনি ব্রেক্সিটবিরোধীদের অনেকে দাবি তুলেছেন আরেকটি গণভোটের। ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা নিয়ে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেছেন দুই দুইজন ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী। অন্য মন্ত্রণালয়েরও কয়েকজন সরে দাঁড়িয়েছেন। এদের মধ্যে সর্বশেষ হচ্ছেন বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। এসবের পাশাপাশি, থেরেসা মেকে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সংসদীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে আস্থা ভোটের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন দলটির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। ৪৮ জন দাবি করলেই ডাকা হবে আস্থা ভোট।

চুক্তির বিরোধীদের মূল আপত্তি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে না কি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডের মতো ইইউয়ের শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে তা নিয়ে। যদি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হয় তাহলে সমস্যা দেখা দেয়, স্বাধীন দেশ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে তার সীমান্ত ব্যবস্থা কার্যকর করা নিয়ে। কোনও পক্ষই কোনও ‘হার্ড বর্ডার’ চায় না। অন্যদিকে, যদি ইইউয়ের শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হয় নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে, তাহলে যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তার একরকম সীমান্ত তৈরি হয়ে যাবে।

থেরেসা মের প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে থেরেসা মের দল ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরাই লেবার পার্টি, এস এন পি লিবারেল ডেমোক্র্যাট এদং দি ইউ পপির মতো ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভিড়েছেন। তারা সাবই সংসদে থেরেসা মের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, ‘থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি এতটাই খারাপ যে খোদ সরকারি দল হয়েও তারা ভোটাভুটির দিন পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা দুই সপ্তাহ আগে থেকেই জানি, ভোট হলে থেরেসা মের চরম বাজে চুক্তিটি পরাজিত হবে। কারণ এটি যুক্তরাজ্যের জন্য ক্ষতিকারক। এরকম পরিস্থিতিতে যেখানে তার ইইউ নেতাদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসা উচিত ছিল, সেখানে তিনি তার চুক্তিটি পাসের জন্যই কাজ করতে থাকলেন। তিনি নতুন নির্বাচন ডাকতে পারতেন, যাতে নতুন সরকার ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারে।’

লেবার পার্টির আরেক সংসদ সদস্য ক্রিস লেসলি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) সংসদে থেরেসা মের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের প্রস্তাব উত্থাপিত হতে পারে।

এদিকে থেরেসা মে যদি ব্রেক্সিট ভোট পিছিয়েই দেন তাহলে, পরবর্তীতে ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে কি না যুক্তরাজ্য সে বিষয়ে ইইউ কোর্ট একটি রায় দিয়েছে সোমবার (১০ ডিসেম্বর)। আদালতের রায়, যুক্তরাজ্য চাইলে নিজের একক সিদ্ধান্তেই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে। সেখানে ইইউ কোনও আপত্তি করতে পারবে না।