যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা আয় বৈষম্যের শিকার

বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিসহ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এশীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা আয় বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তাদের আয় কম। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৯ লাখ মানুষ বছরে ৩২০ কোটি পাউন্ডের আয় থেকে বঞ্চিত হন শুধুমাত্র নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতার কারণে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছেন স্নাতক পাস করা কৃষ্ণাঙ্গরা। ‘রেজোল্যুশন ফাউন্ডেশন’ নামের সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা আয় বৈষম্যের এসব তথ্য জেনেছে ১০ বছর ধরে এক লাখ লোকের ওপর চালানো জরিপের ফলাফল থেকে। ব্রিটিশ সরকার এই বৈষম্য নিরসনে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে।uk-visa-rules-indian-students-education_5375397a-b016-11e8-a206-120fd6da8a0d

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ২০০৭-২০১৭ মেয়াদে কৃষ্ণাঙ্গ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের যে ৩২০ কোটি পাউন্ড হারাতে হয়েছে তা অনেক বড় একটি অংক। অথচ পুরো অর্থনীতি জুড়ে চলা এই আয় হারানোর ঘটনার পেছেনে কোনও ঘোষিত কারণ নেই। নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। বাংলাদেশি স্নাতক সম্পন্ন করা ব্যক্তিরা ঘণ্টা প্রতি গড়ে ১২ শতাংশ কম আয় করেন। আর যারা স্নাতক সম্পন্ন করেননি, তাদের অবস্থা আরও খারাপ। গবেষণায় দেখা গেছে, একই কাজে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তারা ঘণ্টা প্রতি ১৪ শতাংশ কম আয় করেন। অন্যদিকে স্নাতকহীন কৃষ্ণাঙ্গরা আয় করেন ৯ শতাংশ কম।  সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে স্নাতক সম্পন্ন করা কৃষ্ণাঙ্গরা। তারা স্নাতক সম্পন্নকারী শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম আয় করেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নীতি বিশ্লেষক ক্যাথলিন হেনেহান বলেছেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয়, এবং নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুরা শ্রম বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। রেকর্ড পরিমাণ বিএএমই (ব্ল্যাক, এশিয়ান, মাইনরিটি অ্যান্ড এথনিক) হিসেবে পরিচিত সংখ্যালঘুরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। বর্তমানে কর্মক্ষেত্রেও তাদের উপস্থিতি রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু যুক্তরাজ্যে বিএএমই হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীগুলোর সদস্য যে ১৬ লাখ মানুষ তাদের অনেকেই কর্মক্ষেত্রে দৃষ্টিগ্রাহ্য মাত্রায় বাধার সম্মুখীন হন। তাদের ক্ষেত্রে আয় বৈষম্যের পরিমাণ প্রায় ৩২০ কোটি ডলার। রেজোল্যুশন ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা আয় বৈষম্যের এই হিসেব করতে ব্যহার করেছে, ১০ বছর ধরে এক লাখ লোকের ওপর চালানো জরিপের ফলাফলকে।

এ বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে চালু হওয়া নতুন এক আইনে বলা হয়েছে, ২৫০ বা তার চেয়ে বেশি কর্মী আছে এমন প্রতিষ্ঠানকে নারী ও পুরুষ কর্মীদের মধ্যকার আয়ের ব্যবধান প্রকাশ করতে হবে। এখন লিঙ্গভিত্তিক আয় বৈষম্যের হিসেবের পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে বিএএমই হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীর মানুষদের আয়ের পার্থক্য কত তা প্রকাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে ব্রিটিশ সরকার।

যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বৈচিত্র ব্যবসার জন্য ভালো। আর সরকার কর্মক্ষেত্রকে সবার জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। আমরা আইন প্রণয়ন করেছি, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এবং উচ্চ পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা প্রতিনিধিত্বমূলক হন। এখন আমরা এমন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি যার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে থাকা আয় বৈষম্য চিহ্নিত করে বৈষম্যের বিলোপ সাধনে সহায়তা করা।’