এলএসডির প্রভাব: মস্তিষ্কের ছবিতে উঠে এলো চমকপ্রদ তথ্য

আধুনিক এক স্ক্যানিং পদ্ধতিতে মানুষের মস্তিষ্কের ওপর এলএসডির গভীর প্রভাব সম্পর্কে জানা গেছে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে শক্তিশালী এই মাদক ব্যবহারকারীদের মধ্যে কয়েকজন বৈজ্ঞানিক গবেষণার খাতিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করতে সম্মতি দিয়েছেন। তাদের মস্তিষ্কের ওই ছবি থেকে গবেষকরা পেয়েছেন নানা চমকপ্রদ তথ্য।

noname

এলএসডি কীভাবে মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক ভিত্তিমূলে কাজ করে সে সম্পর্কে অভূতপূর্ব ধারণা পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাপ্ত ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানান, এই সাইকেডেলিক পদার্থটি মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড ও যোগাযোগব্যবস্থার ওপর কাজ করে। এলএসডি গ্রহীতার মস্তিষ্কের এই সব ছবি থেকে হ্যালুসিনেশন বা কাল্পনিক দৃশ্য দেখার বিষয়েও নতুন তত্ত্ব প্রণয়ন করা হতে পারে। এই গবেষণার ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এলএসডি ব্যবহার করার বিষয়ে অগ্রগতি তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: অস্ত্রোপচার-কেমোথেরাপি ছাড়াই মুক্তি মিলবে স্তন ক্যান্সার থেকে!

এলএসডি বা লাইসারজিক এসিড ডাইথ্যালামাইড প্রথমবারের মতো বিশ্লেষণ করা হয় ১৯৩৮ সালে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের আগে এর স্নায়বিক প্রভাব সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। ১৯৫০ ও ষাটের দশকে মনোবিজ্ঞান ও স্নায়বিক বিজ্ঞান শাখায় গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এলএসডি। কিন্তু এই মাদকের ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা ও তরুণ প্রজন্মের সংস্কৃতিতে সেই ক্ষমতার প্রভাবের কারণে ১৯৬০ সালে এলএসডি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

এলএসডিকে অবৈধ ঘোষণা করার ফলে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। সম্প্রতি পরিচালিত এই গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে যুক্তরাজ্যের বেকলি ফাউন্ডেশন। বেকলি ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমান্দা ফিল্ডিং বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত এলএসডির প্রভাব থেকেই মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতি ও মানুষের চৈতন্য সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম।’  

আরও পড়ুন: আশঙ্কার চেয়েও ভীতিকর জিকা ভাইরাস! 

এই গবেষণার প্রধান গবেষক নিউরো-সাইকোফার্মাকোলজির প্রফেসর ও সরকারের সাবেক মাদক বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড নাট বলেন, ‘নিউরোসায়েন্টিস্টরা এই মুহূর্তটির জন্য ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছিলেন। পার্টিক্যাল ফিজিক্সে হিগস বোসন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, নিউরোসায়েন্টিস্টদের কাছে এই আবিষ্কার ততখানি গুরুত্ব রাখে।’

ডেভিড নাট তার সহকর্মীদের নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে কাজ শুরু করেন। আলাদা আলাদা দুইদিন তাদের ওপর ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ও ট্যাবলেট আকারে ৭৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি প্রয়োগ করা হয়।

এরপর মস্তিষ্কের ছবি তোলার নানা ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তের চলাচল মাপা হয়। মাদক গ্রহণ করা ও না করা অবস্থায় একই স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কের ছবি তুলে পার্থক্য বের করা হয়।

noname

নাটের সহকর্মী কারহার্ট হ্যারিস বলেন, ‘এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এইসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, এলএসডি নেওয়া একটি মস্তিষ্ককে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি সমন্বিত একটি মস্তিষ্ক। কিন্তু একই সঙ্গে এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়ে।

হ্যারিস বলেন, ‘এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকসময় ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে।’

আরও পড়ুন: 'মানুষের যৌনতার ইতিহাস ধারণার চেয়েও দুঃসাহসিক'

বিজ্ঞানীরা জানান,  এলএসডি ব্যবহারকারীরা যে হ্যালুসিনেশন দেখেন সে সম্পর্কিত তথ্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ থেকে আসে। সে সব তথ্য সবসময় মস্তিষ্কের পেছন দিকে অবস্থিত ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স থেকে আসে না অর্থাৎ মানুষের দৃশ্যমান স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে না। এই মাদকের প্রভাবে মস্তিষ্কের কাজ করার ভিন্ন ভিন্ন অংশ মিলেমিশে যায়।

ছবি থেকে আরও জানা গেছে, একই সঙ্গে এলএসডির কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে ও পৃথকভাবে কাজ করতে থাকে। ফলে ব্যবহারকারী পৃথিবীর সঙ্গে নিজের একক এক সম্পর্ক অনুভব করেন যাকে বলা হয় ‘ইগো ডিসোল্যুশন’ বা ‘অহম দ্রবীভূত’ হয়ে যাওয়া। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/ইউআর/এএ/