মার্কিন পুঁজিবাদের পরিবর্তনে বৈপ্লবিক আইনের প্রস্তাব!

যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিবাদের চরিত্র পাল্টে দিতে আসছে নতুন এক বৈপ্লবিক আইনের প্রস্তাব! ম্যাসাচুসেটস থেকে নির্বাচিত সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন প্রস্তাব করেছেন ‘অ্যাকাউন্টিবিল ক্যাপিটালিজম অ্যাক্ট’ নামে অভিহিত আইনটি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওই আইন পাস হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় ‘মৌলিক পরিবর্তন’ আসবে। বড় বড় কর্পোরেশনগুলোর লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। শ্রমিকরা পাবেন আরও বেশি ক্ষমতা। সম্পদের বণ্টনে আসবে সমতা। কর্পোরেশনগুলো শুধু শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফার কথা বিবেচনা করে চালিত হতে পারবে না। এলিজাবেথ ওয়ারেনের প্রস্তাবটির প্রতি সমর্থন জানাতে যেমন এগিয়ে এসেছেন শিক্ষাবিদরা তেমনি তার সমালোচনায় মুখ খুলেছেন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ও বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। ওয়ারেনের মতে, এই আইনটি তিনি প্রস্তাব করেছেন এমন একটি ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে যেখানে কর্পোরেশনগুলো শ্রমিকের ক্ষতির বিনিময়ে শেয়ার হোল্ডারদের জন্য মুনাফা নিশ্চিতে কাজ করে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন ।সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন

 ‘অ্যাকাউন্টিবিল ক্যাপিটালিজম অ্যাক্ট’ নামে অভিহিত প্রস্তাবটি পাস হলে বছরে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় করা কর্পোরেশনগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া বিশেষ বিধান মেনে চলতে হবে। ওই পরিমাণ আয় করা প্রতিষ্ঠানগুলো আর শুধুমাত্র শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে পারবে না। কর্পোরেশনগুলোকে শ্রমিক, ক্রেতা এবং যে শহরগুলো থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় সেগুলোর লাভ-ক্ষতির বিষয়েও ভাবতে হবে। বর্তমানে পরিচালন বিধিমালা কর্পোরেশনগুলোকে দেয় রাজ্য সরকারগুলো। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন বিভাগ খোলা হবে যার কাজ হবে কর্পোরেশনগুলোকে বিধি মেনে চলার শর্তে ব্যবসার অনুমতি দেওয়া ও প্রয়োজনে তা বাতিল করা। আমেরিকার রাজ্যগুলোর যে কোনওটির এটর্নি জেনারেল অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের জন্য দেওয়া অনুমতি বাতিল করে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার।

কর্পোরেশনগুলোর ৪০ শতাংশ পরিচালককে শ্রমিকদের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। এই ধারার আওতায় পড়বে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত তিন হাজার ৫০০ মার্কিন প্রতিষ্ঠানসহ শত শত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক কোনও খাতে অর্থ খরচের আগে কর্পোরেশনের ৭৫ শতাংশ পরিচালক এবং শেয়ার হোল্ডারের অনুমতি নেওয়া লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া বিধান না মানলে প্রতিষ্ঠানের যে কোনও শেয়ার হোল্ডার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রস্তাবিত আইনিটির বিষয়ে ওয়ারেন লিখেছেন, ‘শেয়ার হোল্ডারদের জন্য সর্বোচ্চ মুনাফা করার যে উদ্দেশ্য নিয়ে আমেরিকার বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় তার একমাত্র লক্ষ্য ধনীকে আরও ধনী বানানো। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। কিন্তু স্থবির হয়ে আছে তাদের প্রকৃত আয়। শ্রমিকরা উৎপাদনে যে অবদান রাখেন, সে অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান না।’ তার ভাষ্য, শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়া ও স্থানীয় পর্যায়ে বিনিয়োগ না করার কৌশল অবলম্বন করে চলা কর্পোরেশনগুলোর ‘ব্যবসার পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্যই’ নতুন আইনের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

অর্থনীতি ও কর্পোরেট ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ কয়েকজন শিক্ষাবিদ ওয়ারেনের প্রস্তাবের প্রশংসা করেছেন। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট হকেটের নেতৃত্বে ওয়ারেনকে লিখিত একটি চিঠিতে শিক্ষাবিদরা উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা মনে করি, এমন আইনের প্রয়োজনীয়তা বহু আগে থেকেই বিদ্যমান। আমাদের কেউ কেউ আপনার প্রস্তাবিত বিধির চেয়ে আরও বেশি কিছু করার পক্ষে। তবে আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত, আপনার আনা প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট সাম্রাজ্যের পরিবর্তন ঘটাতে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

তবে মুনাফার ভিত্তিতে চলা আমেরিকান পুঁজিবাদের সংস্কারের আনা প্রস্তাবটি যে শুধু প্রশংসাই পেয়েছে তা নয়। ওয়ারেনের প্রস্তাবিত আইনের বিরুদ্ধে বেঞ্চমার্ক ইনভেস্টমেন্টের সিইও কেভিন কেলি ফক্স টেলিভিশন চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, ‘কর্পোরেশনগুলো কি করবে আর কি করবে না তা নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার কাছে ওয়ারেনের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে কম। মুক্তবাজার অর্থনীতি তাদেরকেই পুরস্কৃত করবে যারা শেয়ার হোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করবে।’

ফোর্বস মিডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্টিভ ফোর্বস একই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন, ‘তিনি যা প্রস্তাব করেছেন তাতে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়বে। এভাবে কোনও কাজ হবে না।’