‘আর পারি না গো বাবা’

২০ জুলাই মঙ্গলবার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হুইলচেয়ারে বসে আর্তনাদ করছেন এক নারী। বার বার বলছেন একই কথা– আর পারি না, বাবা গো। পরিবারের কয়েকজন সঙ্গেই আছেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছিলেন তার স্বামী। সব শুনে চিকিৎসক বললেন, ওই নারীকে কিডনি হাসপাতালে নিতে হবে। তার ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন। সঙ্গে আবার করোনার অন্যতম উপসর্গ শ্বাসকষ্টও আছে তার। স্বামীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার কিডনির সমস্যা। ডায়ালাইসিসই লাগবে। গতকাল থেকে শ্বাসকষ্ট। এখন কিডনি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। করোনা আছে কিনা জানি না।’

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সকাল থেকেই দেখা যায়, ঢামেক হাসপাতালে রোগী আসছে ও মৃতদেহ বের হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, এই হাসপাতালে কোনও আইসিইউ বেডই খালি নেই।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেডের জন্য সিরিয়াল আছে। কেউ মারা গেলেই বেড খালি হচ্ছে। সেখানে আবার সিরিয়াল অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে রোগী।

দেশে করোনা মহামারি এখন চরম সংকটময় মুহূর্তে আছে। মাত্র সাতদিন আগেই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৭৬৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত আটদিনে শনাক্ত হয় প্রায় সাড়ে ৮৭ হাজার। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ হাজার করে শনাক্ত হচ্ছে। রোগীর সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতালের বেড সংকটও।

মৃত্যুর হারও ঊর্ধ্বমুখী। এখন প্রতিদিন গড়ে মারা যাচ্ছেন ২০০ জনের বেশি। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ২৩১ জন। যেটি গতকালই জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

অ্যাম্বুলেন্সে-রোগী-2

মাদারীপুর থেকে চিকিৎসা নিতে মাত্র দুদিন আগেই ভর্তি হয়েছিলেন কেরামত আলী। বয়স ৫৫ বছর। জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট নিয়েই এসেছিলেন ঢাকা পর্যন্ত। দুদিন পর ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।

এদিকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার আশায় এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছে মানুষ। ঢাকা মেডিক্যালে যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই আসছেন ঢাকার বাইরে থেকে। তাদের বেশিরভাগই আবার জানেন না রোগী করোনা আক্রান্ত, নাকি মৌসুমি ঠান্ডা জ্বর।