‘ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান এখন খাতা-কলমে’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা কী তা জানার প্রচেষ্টা চালিয়েছে বাংলা ট্রিবিউন। তারই অংশ হিসেবে কথা বলেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশের রাজনীতি নিয়ে নিজের প্রত্যাশাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: একজন ছাত্রনেতা হিসেবে বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

দীপক শীল: ছাত্র রাজনীতির একজন কর্মী হিসেবে অবশ্যই এর ইতিবাচক দিকটি আমি দেখবো। কারণ স্বাধীনতার ৫০ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বা এখানকার রাজনৈতিক কর্মীদের অবদান অসামান্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা বাংলার মানুষকে মুক্তির চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা বড় ধরনের ভূমিকা দৃশ্যমান হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: স্বাধীনতার ৫০ তো পার হয়ে গেলো, আগামীর ৫০ বছর কেমন আশা করবেন?

দীপক শীল: নিশ্চয়ই স্বাধীনতার স্বপ্ন-স্বাদ বাস্তবায়নে আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, আদর্শের জায়গা এখনও আমরা পূরণ করতে পারিনি। সেখান থেকে আমি মনে করি ও আশা রাখি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা মুখ্য ভূমিকা থাকবে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের। একটা কথা আছে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন’। সেখান থেকে এ দায়ভার আমাদের (ঢাবি শিক্ষার্থীদের) ওপরই বর্তায়।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাম্পাসে রাজনীতির সংস্কৃতির পরিবর্তন আসছে কিআসলে কী পরিবর্তন দেখছেন?

দীপক শীল: হ্যাঁ, একটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু পরিবর্তনটা ইতিবাচক পরিবর্তন বলে আমি মনে করি না। ক্যাম্পাসে একটা রাজনৈতিক দখলদারিত্বের সংস্কৃতি চালু হয়েছে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে। সেটি নেতিবাচক একটা প্রভাব তৈরি করছে।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব আছে কিনা, থাকলে কী প্রভাব পড়ছে বলে আপনি মনে করেন?

দীপক শীল: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর একটা রাজনৈতিক প্রভাব আছে বৈকি। তবে তা ইতিবাচক বলে আমি মনে করি না।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিলো। শতবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কোন দিকেছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করবেনবিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ক্রমান্বয়ে পেছনে যাচ্ছে, এর পেছনে কোনও রাজনৈতিক প্রভাব আছে কিনা?

দীপক শীল: হ্যাঁ, অবশ্যই কারণ আছে। যখন এশিয়ার একশটি বিশ্বদ্যালয়ের মধ্যেও ঢাকা বিশ্বদ্যালয় স্থান পায় না, তা খুবই হতাশাজনক। এখানে আমি মনে করি রাজনৈতিক দলাদলি, বিভিন্ন কারণে লাল দল-নীল দল সরকার দলের খাতিরদার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ব্যবহার। এর ফলে শিক্ষার মান কমে গেছে বলে আমি মনে করি। শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি আগের তুলনায় কম বলে আমি মনে করি।

বাংলা ট্রিবিউন: বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? সহাবস্থান আছে কিনা?

দীপক শীল: বর্তমানে কথিত সহাবস্থান খাতা কলমে হয়তো আছে। কিন্তু কার্যক্রমে নেই বলে আমি মনে করি।

বাংলা ট্রিবিউন: হলগুলোতে ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্য রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ, এ বিষয়ে কী বলবেন?

দীপক শীল: হ্যাঁ, বিশ্বদ্যালয়ের হলগুলো সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের কাছে একেবারে জিম্মি। সেখানে গণরুম থেকে শুরু করে সব জায়গায় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য।

বাংলা ট্রিবিউন: ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকলে গ্রহণের প্রবণতা আছে কিনা? না থাকলে এটি শিক্ষার পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন?

দীপক শীল: অবশ্যই ভিন্নমতকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ করা আমরা যারা বামধারার রাজনীতি করি, বিশেষ করে ছাত্র ইউনিয়ন, আমার ভিন্নমতকে সবসময় সাধুবাদ জানাই। এটি শিক্ষার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে আমি মনে করি।