X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

‘মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি’

মাজহারুল হক লিপু, মাগুরা
০৭ মার্চ ২০২২, ১১:০০আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৫:৫৯

সত্তরোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান সময় পেলেই ছবিটি হাতে নিয়ে দুই চোখ ভরে দেখেন। মনের অজান্তেই ফিরে যান ৫০ বছর আগের দিনগুলোতে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে দেশ স্বাধীন করতে বাড়ি ছেড়েছিলেন মাগুরার মহম্মদপুরের হাফিজুর রহমান। তখন তিনি ছিলেন ২১ বছরের তরুণ।

আরও কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মহম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় নেমে পড়েন যুদ্ধে। প্রথমে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের খোঁজখবর নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন তারা। পরে যুদ্ধে অংশ নেন হাফিজুর রহমান। যুদ্ধের নয় মাস থেকেছেন আত্মগোপনে। বাড়ির খুব কাছে গিয়েও একবারের জন্য ঘরে যেতে পারেননি।

সেসময়ের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি এই অঞ্চলের সন্তান। এখানেই বড় হয়েছি। এজন্য এখানের সবগুলো স্থান ছিল পরিচিত। এলাকার রাজাকারদের প্রতিরোধ করাই ছিল আমাদের প্রধান কাজ। রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিতাম আমরা। তাদের ধরে এনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিতাম। বেশ কয়েকটি বড় অপারেশনে অংশ নিয়েছিলাম। আজও মনে পড়ে সেই দুই ভাই আহম্মদ ও মহম্মদের শহীদ হওয়ার কথা।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর মহম্মদপুর উপজেলার মুসল্লি বাড়ির সামনে পুকুরের দুদিক থেকে গোলাম ইয়াকুব ও মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকীর (কমল সিদ্দিকী, বীর উত্তম) নেতৃত্বে আমরা পরিকল্পিত আক্রমণ করেছিলাম। তখন সিও অফিসে ছিল শত্রুদের ক্যাম্প। সেখান থেকে পাল্টা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়ছিল। সবার সামনে ছিলেন আহম্মদ ও মহম্মদ। হঠাৎ গুলিতে মহম্মদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করতে ছোট ভাই আহম্মদ জাপটে ধরেন। এ সময় আহম্মদকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে আহম্মদও শহীদ হন। চোখের সামনে তাদের মৃত্যু হলো। সেই দিনটির কথা আজও ভুলতে পারি না।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চার বন্ধু মিলে একটি ছবি তুলে বাঁধাই করে রেখেছিলেন। সময় পেলেই ছবিটি হাতে নিয়ে দুই চোখ ভরে দেখেন, আর স্মৃতিগুলো স্মরণ করেন হাফিজুর রহমান।

এই ছবির প্রসঙ্গে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিজয় অর্জনের পর আমরা একদিকে যেমন স্বজন হারানোর বেদনায় পুড়ে চলেছি অন্যদিকে নতুন স্বপ্ন ছিল সবার চোখে। মহম্মদপুর উপজেলায় কোনও স্টুডিও ছিল না। তাই ভাবলাম অস্ত্র জমা দেওয়ার আগে মাগুরায় গিয়ে একটা ছবি তুলি। চার বন্ধু তখন খেয়ালি স্টুডিওতে ছবিটি তুলেছিলাম। ছবিতে আমার সঙ্গে রয়েছেন সোহরাব হোসেন, আনোয়ার হোসেন মন্টু ও একেএম ফজলুল হক।’

হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি। এই ছবিটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার দুই কন্যাসন্তান ছবিটি নিয়ে গর্ব করে। আজ যদি সবাই তাদের সন্তানকে এমন গল্প শোনাতে পারতো। তবে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা যেতো না। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানানো খুব জরুরি। এতে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত হবে।’

/এএম/ 
সম্পর্কিত
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা: সাক্ষ্য দিলেন বিচারক ও ৩ পুলিশ
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আরও ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় ৩ চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ
সর্বশেষ খবর
পানীয়তে গোলাপের নির্যাস মেশালে যেসব উপকার পাওয়া যাবে
পানীয়তে গোলাপের নির্যাস মেশালে যেসব উপকার পাওয়া যাবে
লিচুর বিচি গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু
লিচুর বিচি গলায় আটকে শিশুর মৃত্যু
৭১ সালের পর প্রথম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ
কাশ্মীরে হামলা৭১ সালের পর প্রথম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিরাপত্তা মহড়ার নির্দেশ
প্রাথমিকে আরও একটি নতুন অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি নতুন অধিদফতর হচ্ছে
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে মাংস আমদানি চাপ আসছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে মাংস আমদানি চাপ আসছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা