'স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি অকল্পনীয়'

স্বাস্থ্যখাতে যে কতটা উন্নয়ন হয়েছে সেটা এককথায় অকল্পনীয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রাও অনেক দূরে। কিন্তু উন্নয়ন হয়েছে অনেক।– স্বাধীনতার ৫০ এ এসে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সাফল্যের কথা জানালেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রান্তিক জনগণের জন্য উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স এবং উপজেলা সাব সেন্টার করা হয় প্রথমেই। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে এখন এমন একটা অবস্থায় গিয়েছে যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনও বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা দেখতে। সৌভাগ্যক্রমে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলাম আমি।

আমরা গিয়েছিলাম মৌলভীবাজারের কুলাউড়াতে। সেখানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন শেষে তিনি যা বলেছিলেন, তাতে আমি অবাক। জাতিসংঘে ফিরে গিয়ে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘স্বল্পখরচে গ্রামীণ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যদি কোনও চিন্তাভাবনা কারও থাকে, তা হলে বাংলাদেশে গিয়ে দেখে আসতে হবে।’

নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতের গর্ব করার মতো অনেক কিছু রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শেখার মতো বিষয় হচ্ছে, প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি। ভারতের উচিৎ বাংলাদেশে গিয়ে তারা কিভাবে এটা করলো তা জেনে আসা। স্যানিটেশনে বাংলাদেশের সফলতাও প্রায় শতভাগ।

পোলিও নির্মূল করতে পেরেছি আমরা। যদিও পাশের দেশ ভারত বারবার পোলিওতে হোঁচট খেয়েছে। ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মা দূর করাতেও বাংলাদেশের সাফল্য রয়েছে।

মশা রয়েছে। কিন্তু ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব নেই আমাদের। ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশের সাফল্য দুনিয়াজোড়া। আমরা ভ্যাকসিন হিরো ‍পুরস্কারও পেয়েছি।

শিশু ও মাত্যৃমৃত্যু হারে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জন করেছি। গড় আয়ু বাড়াতে পেরেছি।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আজ দেশের প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে পেরেছি। হাসপাতালের বেড বেড়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ তৈরি হয়েছে। যদিও অনেক জায়গায় চিকিৎসক ঘাটতি আছে।

বাংলাদেশের যুগান্তকারী আরেকটি অর্জন হচ্ছে, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ক্লিনিক। প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এখন বাংলাদেশে আছে। এখান থেকে ৩০-৩২টি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বাংলাদেশ একদিন আন্তর্জাতিক বড় পুরস্কার পেয়ে যেতে পারে।

প্রতিটি ১০০ শয্যার জেলা হাসপাতালকে ২০০ শয্যার, এমনকি ২৫০ শয্যার হাসপাতালেও উন্নীত করা হয়েছে। সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসকও রয়েছেন যথেষ্ট।

৫০০ শয্যার হাসপাতালকে ৯০০ শয্যা, ১০০০ শয্যার হাসপাতালে ১৫০০ শয্যার করা হয়েছে। অনেকগুলো বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়েছে। কিডনি, হার্ট, নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটও করা হয়েছে।

৫০ বছরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সেন্টার অব মেডিক্যাল এক্সিলেন্স বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়াও রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি খুলনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০৫টি মেডিক্যাল কলেজ করা হয়েছে। যেটা কোয়ালিটি হেলথ কেয়ারের জন্য খুব প্রয়োজন।

দুর্বলতা ছিল নার্সিং খাতে। সেখানেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করেছেন। প্রতিটি জেলায় নার্সিং কলেজ এবং নার্সিং ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রথম শ্রেণিরও। 

হেলথ টেকনোলজিস্টদের অনেক পদ তৈরি হয়েছে। প্রায় ১২টি হেলথ টেকনোলজিস্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। এ সব কিছুই গত ৫০ বছরে আমরা পর্যায়ক্রমে পেয়েছি।

এখানে উল্লেখ করতেই হয়, এসবের বেশিরভাগই অর্জন হয়েছে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ ও পরে ২০০৭-০৮ থেকে আজ পর্যন্ত থাকা সরকারের সময়ে।