রাঙামাটির পর্যটনে ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য

Rangamati Paztan pic (1)শীতের আগমনী বার্তায় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটিতে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়। হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের আশা, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সরব উপস্থিতিতে মুখর থাকবে এই পার্বত্য জেলা।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম লেক, পাহাড় ও ঝরনার জন্য সুপরিচিত রাঙামাটি। এসব জায়গাকে ঘিরে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহ ব্যাপক। রাঙামাটির বেশকিছু পর্যটন স্পটে এখন তাদের ভিড় লক্ষণীয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিসি বাংলো, বেরান্যা, বরগাঙ, আরণ্যকসহ আরও কিছু স্পট।

রাঙামাটিতে ভ্রমণের জন্য রয়েছে আরও বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে পেদা টিংটিং, সুবলং ঝরনা, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পাহাড়, নদী, ঝরনাও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

মূলত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে পর্যটন মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অবশ্য নভেম্বরের শুরুতেই রাঙামাটিতে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। শান্ত কাপ্তাই হ্রদ ও ঝুলন্ত সেতুর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ তারা। ১৯৮৫ সালে নির্মিত ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের ঝুলন্ত সেতুটি রাঙামাটির পর্যটনের ভিত্তি।

Rangamati Paztan pic (3)হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটির অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। পাহাড়ি এই জনপদে বিভিন্ন বয়সী ভ্রমণবিলাসীদের পদচারণা এখন চোখে পড়ার মতো। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা আলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানকার মতো মনোরম দৃশ্য বাংলাদেশের আর কোথাও দেখিনি।’

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারাদেশ থেকে হাজারও পর্যটক আসছেন অরণ্যসুন্দরী রাঙামাটিতে। বরিশাল থেকে বেড়াতে এসেছেন মো. মঈন। তিনি হ্রদের পানিতে স্নান করেছেন। তার কথায়, ‘এমন বিশাল লেকে কখনও গোসল করা হয়নি। এককথায় অসাধারণ অনুভূতি। এর আগে কয়েকটি ঝরনায় গা ভিজিয়েছি। এত শীতল আর স্বচ্ছ জল সত্যিই মুগ্ধকর।’

নগরজীবনের ক্লান্তি ভুলতে বগুড়া থেকে এসেছেন বলে জানালেন মনোয়ারা আক্তার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এখানে এসে মনে হলো, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় ঘুরছি।’

এদিকে পর্যটক সমাগম হওয়ায় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট। নভেম্বর থেকেই রাঙামাটিতে পর্যটন ব্যবসা সরগর দেখে তাদের আশা, এই মৌসুমের পুরোটা জুড়েই ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণা থাকবে রাঙামাটিতে।

রাঙামাটিবোট ইজারাদার প্রতিনিধি মো. রমজান আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামনে পর্যটন মৌসুম শুরু হবে। কিন্তু এখনই যা দেখছি তাতে আমাদের আশা, প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে রাঙামাটিতে। আজও (শুক্রবার) কয়েকটি বোট বিভিন্ন স্পটে গেছে।’

পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই প্রচুর হোটেল বুকিং হচ্ছে বলে জানান রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে এবারও আশা করছি, প্রকৃতির টানে প্রচুর পর্যটক হাজির হবেন রাঙামাটিতে। ফলে মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’

গত বছরের জুনে পাহাড় ধসের কারণে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় রাঙামাটির পর্যটন শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়েছিল। এসব সমস্যা কাটিয়ে এখন রাঙামাটিতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে।

রাঙামাটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা। হ্রদ পরিবেষ্টিত পর্যটন শহরে চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাক্, পাংখোয়া, লুসাই, সুজেসাওতাল, রাখাইন, বাঙালিসহ ১৪টি জনগোষ্ঠী বসবাস করে। ফলে এই পাহাড়ি ভূ-ভাগে দেখা যায় বৈচিত্র্যের ঐক্যতান।

আরও পড়ুন-
মাটি লাল বলেই ‘রাঙামাটি’

‘তিতলি’র প্রভাবে পর্যটক শূন্য রাঙামাটি

পরিকল্পনার বৃত্তে রাঙামাটির পর্যটন সম্ভাবনা

পর্যটকদের পদচারণায় মুখর অরণ্যসুন্দরী রাঙামাটি

ঈদে ভ্রমণপিপাসুদের অপেক্ষায় রাঙামাটি