হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা

হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালরাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের পুরনো ভবনে বোমা বিস্ফোরণে জঙ্গি সাইফুল ইসলামের আত্মঘাতী হওয়া ও পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়েছে। বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে দায়ের করা এই মামলার নম্বর ১৫।
মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত কয়েকজনকে। বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমরুল সাহেদ। কলাবাগান থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ আগস্ট রাত ৩টার দিকে পশ্চিম পান্থপথের ৫৭/১/সি নম্বরের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের প্রতিটি কক্ষ তল্লাশির করা হচ্ছিল। এ সময় চতুর্থ তলার ৩০১ নম্বর রুমে তল্লাশির জন্য দরজায় একাধিকবার ধাক্কা দিলে ভেতর থেকে বলা হয়, ‘সকালের আগে দরজা খোলা হইবে না।’ এরপর বিভিন্নভাবে রুমের ভেতর একটি কালো ব্যাগ ও তার দেখতে পেয়ে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে পুলিশ। ভেতরে জঙ্গির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে অবহিত করা হয়। এরপর আশেপাশের ২৩ জন বোর্ডারের সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে হোটেলটি রাতভর ঘেরাও করে রাখা হয়। এছাড়া সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হোটেলের রেজিস্ট্রার অনুযায়ী ৩০১ নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেওয়া ব্যক্তিকে সাইফুল ইসলাম নামে শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে সে আত্মসমর্পণ না করে একটি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হুমকি দিতে থাকে। ওই জঙ্গি বিস্ফোরকসহ রুমের বাইরে বেরিয়ে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তখন জনগণের জানমাল, সরকারি সম্পত্তি, আইনশৃঙ্খলা ও আত্মরক্ষার্থে এবং জঙ্গিকে গ্রেফতারের জন্য সোয়াটের নেতৃত্বে চূড়ান্ত অভিযান শুরু হয় সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে।
প্রথমে পুলিশ ওই হোটেল কক্ষ লক্ষ্য রেখে ৭টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। মুহূর্তেই কক্ষের ভেতর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। হোটেলের বারান্দার রেলিং ও উত্তর পাশের দেয়াল ধসে আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। এরপর সোয়াট সদস্যরা এমফোর রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে হোটেল কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে।

ঘটনাস্থলে অবিস্ফোরিত একটি বোমা পাওয়া যায়। পরে এটি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নিষ্ক্রিয় করে। ৩০১ নম্বর রুমে আনুমানিক ২১ বছর বয়সী এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে

দুমড়েমুচড়ে যাওয়া দুটি সিলিং ফ্যান, দেয়ালের ইটের কিছু ভাঙা অংশ, সিমেন্টের অংশবিশেষ, কিছু কাপড়ের পোড়া ও ছেড়া অংশ, জানালার কাচের কয়েকটি ভাঙা টুকরো, একটি কাঠের টুকরো, ৪৬টি গুলির খোসা, ৯৯৫টি স্প্লিন্টারের লোহার বল, একটি নীল কালো রঙের ট্রাভেল ব্যাগ, লোহার পুরনো ৩০টি তারকাঁটা, একটি এনআইডি কার্ডের ফটোকপি (সাইফুল ইসলাম, পিতা আবুল খায়ের ও ঠিকানাসহ), রিং কাটা একটি তালা, সাড়ে ৮ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, চকোলেট রঙের একটি পুরনো মানিব্যাগ, ১০০ পাতা যুক্ত একটি রেজিস্ট্রার জব্দ করা হয়।
মৃতের ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢামেক মর্গে। পরে জানা যায়, ওই অভিযানে সোয়াট সদস্যরা এমফোর রাইফেলের ৬১টি রাউন্ড গুলি করেছে।
এসআই সৈয়দ ইমরুল সাহেদ এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, জঙ্গিদমনে পুলিশের সাফল্যজনক তৎপরতা, জঙ্গি গ্রেফতার, বিস্ফোরক উদ্ধার, জঙ্গি চিহ্নিতকরণসহ সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে তৎপর হওয়ার আক্রোশে প্রতিশোধের অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশে ওই হোটেলে অবস্থান নিয়েছিল বলে তাদের প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে। নিহত জঙ্গি ও তার অজ্ঞাতনামা সঙ্গীরা দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষে এমন হামলা চালিয়েছে বলে জানান মামলার বাদী।
গত ১৫ আগস্ট সকালে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের পুরনো ভবনে আত্মঘাতী হয় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম (২১)। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যায় সে।
জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আসা মিছিলে সাইফুলের আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে মনে করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
/এনএল/এসএমএন/জেএইচ/ 

আরও পড়ুন-

জঙ্গি সাইফুল বোমার আঘাতেই নিহত