তীব্র গরমে শরীর থেকে ঝরে পড়ছে ঘাম। মনে হচ্ছে— তারা বৃষ্টিতে ভেজা শরীরে কাজ করছেন, নয়তো কেবলই কোনও পুকুর বা নদীতে ডুব দিয়ে গোসল সেরে এসেছেন। অসহনীয় এই গরমেও নির্মাণশ্রমিকদের কোনও ফুসরত নেই। সমানতালে হাত চালিয়ে যাচ্ছন। সরেজমিনে রাজধানীতে কর্মরত নির্মাণশ্রমিকদের এমন চিত্র দেখা গেছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসেও।
এই ইট-সিমেন্টের শহরটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে নির্মাণশ্রমিকরা চলমান তপ্ত রোদে পুড়ছেন প্রতিদিন। তীব্র গরমের জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। শুক্র ও শনিবার সরকার অফিস আদালত বন্ধ থাকে। শুক্রবার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। অনেককে গরমে হোম অফিস করতেও শোনা যায়। কিন্তু অসহনীয় তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি নেই এই শহরের নির্মাণশ্রমিকদের। তাদের নেই কোনও ছুটিও।
সিদ্ধেশ্বরী মনোয়ারা হাসপাতালের সামনের রাস্তার ফুটপাতে টাইলস বসানোর কাজ করছিলেন শামীম আর কলিম মিয়া। দুজনের বাড়িই ময়মনসিংহে। তপ্ত রোদে ঘামতে ঘামতেই ফুটপাতের ঢালাইগুলো শাবল দিয়ে তুলছিলেন। গরমে এমন ভারী কাজ করছেন কীভাবে— জানতে চাইলে শামীম বলেন, আমাদের গরম লাগে না। আমরা এভাবেই কাজ করি। অন্যবারের তুলনায় এবার কাজ করতে একটু কষ্ট হচ্ছে। ঘাম অনেক বেশি পড়তেছে। গলাও শুকায়ে যায়। যত পানি খাই বুকটা খা খা করে। কলিম জানান, একদিন কাজ না করলে তো টাকা পাবো না, খাবো কী। গরমে ঘরে বসে থাকলে তো কেউ ভাত দেবে না। তাই গরম যতই বাড়ুক আমাদের কাজ করাই লাগে।
একই কথা জানান, ভিকারুন নিসা নুন স্কুলের সামনের রাস্তার ফুটপাতে টাইলস বসাতে থাকা চম্পা বেগম। চম্পা আর শরীফা দুই বোন। দুই জনের একজন টাইলস বসাচ্ছেন, আরেকজন সিমেন্ট মাথায় করে নিয়ে আসছেন। চম্পা বললেন, আপনাদের চেয়ে আমাদের গরম বেশিই লাগে। বেশি লাগে দুপুরে। মনে হয় গা হাত পা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্ত উপায় কী। কাজ তো করতে হবে। বাসায় বাচ্চা রেখে আসছি। সে তো খাবে। তার জন্য হলেও আমাকে কাজে আসতেই হবে। শরীফার স্বামী রিকশা চালান। তাদের দুই ছেলে। চার জনের সংসার চলে না স্বামীর একার আয়ে— তাই শরীফাও কাজ করেন এই গরমকে উপেক্ষা করেই।
গরমের মাঝে আজ বুধবার (১ মে) প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, পল্টনে, পরীবাগের পাশের রাস্তায় দেখা গেছে— নির্মাণশ্রমিকরা কাজ করে চলেছেন। পরীবাগের রাস্তার পাশে বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজের জন্য সিমেন্টে পানি মেশাচ্ছিলেন শাপলা খাতুন। ছিপছিপে গড়নের শাপলা তার বাবার সঙ্গে কাজ করছেন। তার বাবাসহ আরও বেশ কজন মানুষ মাটিতে গর্ত করছেন। শাপলা জানালেন, বাড়িতে খাওয়ার মুখ প্রায় ছয় জন। বড় ভাই রিকশা চালায়, বাবা একা কাজ করতো। তাতে আমাদের খেতে কষ্ট হয়। তাই আমিও বাবার সঙ্গে কাজে আসি। গরমে শরীর জ্বলে, পা জ্বলে রাস্তার গরমে। কিন্তু পেটের দায়ে গরম তো সহ্য করতেই হবে।
আবহা্ওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসজুড়েই থাকবে এই তাপপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার (২ মে) ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সেই হিসাবে তাপপ্রবাহের মাত্রা হয়তো কিছুটা কমে আসতে পারে। কিন্তু অস্বস্তিকর গরম কমবে না খুব একটা। ফলে রাস্তায় যারা কাজ করেন, সেসব নির্মাণ শ্রমিকদের মুক্তি নেই।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘কাল বৃস্পতিবার কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে গ্রীষ্মের গরম থাকবে মে মাসজুড়েই।’ ঝড়-বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছু সময়ের জন্য কমে আসতে পারে বলে তিনি জানান।
বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তাপমাত্রার হিসাব অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি যশোর এবং চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া ৪২ ডিগ্রির ওপরে আছে আরও তিন জেলা— খুলনা, পাবনা এবং রাজশাহী। ঢাকায় এখনও পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠেছে ৩৯ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে, যা মঙ্গলবার ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এ হিসাবে আজ ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ছবি: সঞ্চিতা সীতু