লোহাগাড়া থানার সেই ওসিকে বদলির আদেশ বহাল

 

সুপ্রিম কোর্টচট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ফৌজদারি মামলার এক আসামিকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহানকে অন্য থানায় বদলিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। এর ফলে এই সময়ের মধ্যে ওই ওসি'র বদলিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত চেম্বার আদালত এই আদেশ দেন। 

আদালতে ওসি'র আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএম আমিন উদ্দীন। অন্যদিকে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ফৌজদারি মামলার এক আসামিকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় লোহাগড়া থানার ওসি মো. শাহজাহানকে অন্য থানায় বদলির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে ওই সাজার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় হাইকোর্টে তলবকৃত লোহাগড়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দু’জন উপ-পরিদর্শকসহ মোট চার জনের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। উভয়পক্ষের শুনানির পর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে তলবকৃতদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট মতিন খসরু। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ফারজানা শারমিন ও আইনজীবী মোকবুল আহমেদ।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ফৌজদারি মামলার এক আসামিকে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে সাজা দেওয়ার ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দু’জন উপ-পরিদর্শকসহ মোট চার জনকে গত ২৮ জানুয়ারি তলব করেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে গত বছরের ১৪ অক্টোবর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মো. বেলাল উদ্দিনকে প্রদত্ত আট মাসের সাজা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এছাড়া ওই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ বাদীকে কেন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পাঁচ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ অক্টোবর দুই পুরিয়া গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরার অভিযোগে চট্টগ্রামের লোহাগড়া আধুনগরের বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন ভ্রাম্যমান আদালত ৮ মাসের সাজা দেয়। সেই সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে মনজিল মোরসেদ এই রিট আবেদন করেন।

পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্য একটি মামলায় গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাতে বেলালকে গ্রেফতার করে পর দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু গত ১৪ অক্টোবর মোবাইল কোর্টের এক আদেশে দেখানো হয়, বেলা ১২টা ১০ মিনিটে বেলালকে তার গ্রামের বাড়ির সামনে থেকে দুই পুরিয়া গাঁজাসহ হাতেনাতে ধরা হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালতের জব্দ তালিকায় তারিখ বলা হয় ১৩ অক্টোবর রাত ৯টা ৫মিনিট।’ 

এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে, পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্ট স্থাপন করে বাদিকে সাজা দেওয়া হয়েছে। যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী বলেও তিনি জানান।