৬০ স্বাদের ভর্তা ও রকমারি আচারের খোঁজে গাজীপুরে

৬০ ধরনের ভর্তা, ২০ পদের তরকারি আর ৮টি ভিন্ন স্বাদের আচার নিয়ে প্রতিদিনের রসনার আয়োজন করেন তোতা মিয়া। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোকনয়নবাজার গ্রামে নিজ হোটেলে এসব আয়োজন থাকে। পরম  যত্নে বাড়িতেই তিনি হোটেলটি গড়ে তুলেছেন। ৩৬ বছর ধরে তোতা মিয়া জড়িত আছেন হোটেল ব্যবসার সঙ্গে।

Gazipur-Hotel Niribili PICS -1
তোতা মিয়া জানালেন সেই শুরুর কথা। পড়াশোনায় অনাগ্রহের কারণে ১৯ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে একটি হোটেলে খাবার পরিবেশনের কাজ নেন বাড়ি পালিয়ে।
টানা ১৭ বছর সেখানে কাজ করেন। পরে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে একটি ভর্তার হোটেলে একই কাজে যোগ দেন। সেখানে নিজেও ভর্তা তৈরি শিখে নেন। সাত বছর পর তোতা মিয়া কাপাসিয়ার টোকনয়ন বাজারে ‘নিরিবিলি’ নামে একটি হোটেল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে।

Gazipur-Hotel Niribili PICS -3
টোকনয়নবাজার, কাপাসিয়া গাজীপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তোতা মিয়ার হোটেলের খাবার স্বাদ নিতে আসেন। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার তথা বর্তমান রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী- সকল পেশার মানুষই তোতা মিয়ার নিরিবিলি হোটেলে খাবারের স্বাদ নিয়েছেন।
অপসোনিন ফার্মা লিমিটেডের সেলস ম্যানেজার সারোয়ার সাজ্জাদ আলম চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রাম শহরে। চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। কাজের তাগিদে দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘোরেন। তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ যাওয়া হলে নিরিবিলিতে খাওয়া চাই-ই।’
ভর্তা ছাড়াও কবুতর, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায় তোতা মিয়ার হোটেলে। রয়েছে জলপাই, আম, বড়ই, তেঁতুল, বিলম্ব ফল, চালতাসহ নানা জাতের আচারও। তোতা মিয়া জানান, শুধু ভর্তা নয়, আচারের স্বাদ নিতেও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন এখানে।

Gazipur-Hotel Niribili Pic -1
প্রতিদিন তিনশ মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয় এখানে। অর্ডার পেলে আলাদাভাবে তা সরবরাহ করা হয়। বাড়তি খাবার ফ্রিজে রাখা হয় না। এসব খাবার হোটেলের কর্মচারী এবং বিভিন্ন সময় আসা সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে দিয়ে দেওয়া হয় বলে জানালেন তোতা মিয়া।
যে ১৫ জন সার্বক্ষণিক রান্নার কাজে নিয়োজিত থাকেন, তারা সবাই তোতার প্রতিবেশী। আর পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন তোতা মিয়ার আত্মীয়স্বজনরাই।
 নিরিবিলি হোটেলে নিয়মিত মাছ সরবরাহ করেন টোক এলাকার জেলে পরিতোষ তিনি জানান, চাষের চাইতে নদীর মাছই হোটেলের প্রথম চাহিদা। কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদী ছাড়া বিলের মাছও বিক্রি করেন তিনি।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসমত আরা বলেন, ‘তোতা মিয়ার হোটেলের প্রচার বাড়ছে। অনেকের বাড়িতে সাধারণত রকমারি ভর্তা তৈরি করা হয় না। রুচির পরিবর্তন ঘটাতে অনেকেই তোতা মিয়ার হোটেলে খেতে আসেন। আমার প্রশাসনের লোকজন এলে কোনও কোনও সময় তার হোটেলের রকমারি ভর্তা ভাজি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকি।’

Gazipur-Hotel Niribili PICS -2




যেভাবে যাবেন নিরিবিলি হোটেলে
ঢাকা থেকে কাপাসিয়াগামী যেকোনও বাসে করে টোকনয়নবাজার নামতে হবে। স্ট্যান্ড থেকে আনুমানিক তিন মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন নিরিবিলি হোটেল।