অবশেষে উৎসবের অপেক্ষা, স্বাচ্ছন্দ্য এবারও সুতিতেই

দীর্ঘদিনের রোগাক্রান্ত পৃথিবী একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠছে। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এসেছে অনেকটাই। দুই বছরের অপেক্ষা শেষে এবার উৎসবমুখর হয়ে ওঠার পালা। কাল বাদে পরশু বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি এবার চলছে জোরেশোরেই। দুই বছর পর মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন চলছে আনন্দমুখর পরিবেশে। এরপরই রয়েছে ঈদ উৎসব।

 

ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ খান জানালেন, তিনি খুবই আশাবাদী এবারের উৎসব নিয়ে। ‘যদিও এবার বৈশাখ পড়ে গেছে রোজার মধ্যে। বৈশাখে বাইরের অনুষ্ঠানেই বেশি অংশ নেন মানুষ। ফলে রোজা রেখে বৈশাখ উপলক্ষে নতুন পোশাক কেনাকাটায় মানুষের কেমন সাড়া পাওয়া যাবে সেই চিন্তা ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু কোভিড কমে যাওয়ার স্বস্তি আর কেনাকাটায় সবার স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে আমরা ভীষণ আনন্দিত’- বললেন খালিদ।

 

এবার ঈদ ও বৈশাখের কেনাকাটা প্রায় সমানতালে চলছে একইসঙ্গে। দেশীয় পোশাক ইন্ডাস্ট্রিতে লাগতে শুরু করেছে সুবাতাস। খালিদ মাহমুদ খান মনে করেন এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই এক বছরের মধ্যেই কোভিডের ক্ষত সারিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।  

বৈশাখ উপলক্ষে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবি এনেছে বেশিরভাগ ফ্যাশন হাউসই। পাশাপাশি থাকছে কুর্তি ও পরিবারের সবার জন্য ম্যাচিং পোশাক। গরমের কথা মাথায় রেখে বেশিরভাগ পোশাক সুতিতেই করা হয়েছে বলে জানালেন খালিদ মাহমুদ খান। তবে রাতের অনুষ্ঠানগুলোতে পরার জন্য সিল্ক ও মসলিনে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসা হয়েছে কিছু পোশাকে।

প্রচণ্ড গরমে সুতিতেই স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায় দিনভর- এমনটা মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নন্দিনী কায়সার। ধানমন্ডির একটি বৈশাখী মেলায় কেনাকাটা করছিলেন তিনি। জানালেন, এবার ঈদ ও বৈশাখের কেনাকাটা একই সঙ্গে করে ফেলছেন। বৈশাখে একটু হালকা রঙের সুতি পোশাক বেছে নিচ্ছেন। আর ঈদ উপলক্ষে নিচ্ছেন মসলিনের সালোয়ার কামিজ।

বৈশাখে শুধু পোশাক হলেই তো হবে না, দেশীয় মোটিফের আরও কিছু অনুষঙ্গ চাই নিজেকে সাজাতে। তাই মেলা ঘুরে ঘুরে হাতে তৈরি মালা ও দুলের খোঁজ করছিলেন আনিকা। তিনি চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। আনিকা জানালেন, পোশাক মার্কেট থেকে কেনা হলেও হাতে তৈরি গয়না পেতে বৈশাখী মেলা বা অনলাইনই ভরসা।

বৈশাখে লালা সাদার আবেদন চিরন্তন। তবে এর পাশাপাশি আজকাল উজ্জ্বল বিভিন্ন রঙও বেশ দাপটের সঙ্গেই জায়গা করে নিচ্ছে বৈশাখে। হলুদ, নীল, কমলা ও সবুজের মতো রঙগুলো সাদার সঙ্গে ফুটে উঠছে পোশাকে। এমনকি কালো রঙের উপস্থিতিতেও বাড়ছে লাল-সাদার সৌন্দর্য।

ফ্যাশন হাউস মনোতারার স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার মুনতাসরিন বনলতা জানালেন, বৈশাখ উপলক্ষে ভেজিটেবল ডাইয়ের নরম শাড়িগুলো বেশ পছন্দ করছেন সবাই। পাশাপাশি প্যাচওয়ার্ক ও ব্লকের শাড়ির চাহিদাও তুঙ্গে।

মডেল: পূর্ণিমা

মানুষ এখন উৎসবের আমেজের পাশাপাশি স্বস্তি খোঁজেন পোশাকে- এমনটা মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ছাত্রী রোমানা শারমিন। ফলে আরামদায়ক ফেব্রিক ও ছিমছাম অলংকরণই ডিজাইনারদের প্রথম প্রাধান্য থাকে। একারণে বরাবরের মতো এবারও উৎসবের পোশাকে দাপট সুতির। ‘পোশাকের পাশাপাশি অনুসঙ্গ ও সাজেও গরমকে বুড়ো আঙুল দেখানোর প্রস্তুতি চাই। হালকা সাজ, চুলে অল্প কিছু শুভ্র ফুল, মানানসই গয়না ও ব্যাগ- এমনটাই বৈশাখের দিন আপনাকে রাখবে স্বস্তিতে’ বলেন তরুণ এই ডিজাইনার।

মডেল: লিপি পাল
ছবি: নীল নন্দিতা
পোশাক: মনোতারা