চায়ের নাম বাবল টি

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় একটি চা হচ্ছে বাবল টি। আশির দশকে তাইওয়ানে এই চায়ের জন্ম। ঠান্ডা পানীয় হিসেবে এশিয়ার দেশগুলোতে এর জনপ্রিয়তা ছিল সবসময়ই। তবে করোনার পর থেকে পানীয়ের পাশাপাশি স্ন্যাকসজাতীয় খাবার হিসেবেও এটি জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি ব্ল্যাক পার্ল টি কিংবা বোবা টি হিসেবেও পরিচিত। প্রচুর পরিমাণে দুধ ও সাগু দানাজাতীয় খাবার ‘ট্যাপিওকা’ দিয়ে প্রস্তুত করা হয় বাবল টি। 

 

নাম বাবল টি কেন?
এই চা প্রস্তুত করার সময় যখন ঝাঁকানো হয়, তখন প্রচুর বুদবুদ দেখা যায় এতে। এটি এই নামকরণের একটা কারণ। আরেকটা কারণ হচ্ছে ‘ট্যাপিওকা।’ স্বচ্ছ গ্লাসে একটি মোটা স্ট্র দিয়ে পরিবেশন করা হয় বাবল টি। এই স্ট্র দিয়ে সহজেই বাবলের মতো ট্যাপিওকা টেনে মুখে পুরে নেওয়া যায়।  

যেভাবে জনপ্রিয়তা শুরু বাবল টি এর
তাইওয়ানে গেলে দেখবেন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাবল টিয়ের দোকান। বাজার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া পথিক যেমন বোবা টিয়ের মোটা স্ট্রতে টান দিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছে, তেমনি বাবল টিয়ের গ্লাস হাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেছে কিশোরী। আলো ঝলমলে রাস্তাগুলোয় স্ট্রিট ফুডের সঙ্গে দেদার বিক্রি হচ্ছে বাবল টি।

১৯৮৬ সালের দিকে টু সং নামের একজন তাইওয়ানীয় শিল্পী এবং উদ্যোক্তা তাইওয়ানে চা শিল্পের উৎকর্ষতা কাজে লাগিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি সফলতার মুখ দেখতে পারেননি। তার ব্যবসায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ তাইওয়ানিজ ডলার লোকসান হয়। এরপর গতানুগতিক চায়ে ভিন্ন স্বাদ আনতে তিনি দুধ চায়ে সাগু দানাজাতীয় ট্যাপিওকা বল ও বরফের টুকরা যোগ করলেন। তবে সেসময় এমন কোনও স্ট্র ছিল না, যা দিয়ে বাবল চা পানের ক্ষেত্রে মুখে বরফের টুকরা এবং ট্যাপিওকা বল পানকারীর মুখে পৌঁছাবে। ফলে ট্যাপিওকা বল মুখে নেওয়ার জন্য পানকারীরা প্লাস্টিকের চামচের সাহায্য নিতেন। এটা ছিল বেশ ঝামেলাপূর্ণ একটা পদ্ধতি। পরবর্তীতে টু সং নিজে স্ট্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে মোটা স্ট্র ব্যবহার করতে শুরু করেন।

 

 

১৯৮৬ সালের অক্টোবরে ‘হানলিন’ নামে প্রথম বাবল টি প্রস্তুতকারী রেস্টুরেন্ট যাত্রা শুরু করে। এর চমৎকার স্বাদের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। প্রথমদিকে তাইওয়ানের অন্য শহরগুলোতে অসংখ্য বাবল টি শপ গড়ে ওঠে। এরপর অভিজাত রেস্টুরেন্ট ছেড়ে একেবারে সাধারণ স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতেও বাবল টি জায়গা করে নেয়। ১৯৯০ সালের দিকে তাইওয়ানের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বহির্বিশ্বের দিকে নজর দিতে শুরু করে, পৃথিবীর অনেক দেশে নিজেদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটায়। এর ফলে অনেক তাইওয়ানের নাগরিক বাইরের দেশগুলোতে যান। তাদের মাধ্যমে বাবল টি বাইরের দেশগুলোতেও পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯০ সালের দিকেই আমেরিকাতেও বিভিন্ন জায়গায় বাবল টি শপ গড়ে উঠতে শুরু করে। পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম বাবল টি শপ হানলিনের মোট শাখার পরিমাণ বর্তমানে আশিটি। আমেরিকা, কানাডা কিংবা চীনের মূল ভূখন্ডেও এই প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে। 

কীভাবে বানানো হয় বাবল টি? 
৫০ গ্রাম ট্যাপিওকা বল ফুটন্ত পানিতে তিন থেকে পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ফ্রিজের ঠান্ডা পানির মধ্যে ঢেলে দিতে হবে। এতে একটির সঙ্গে আরেকটি আঠালো হয়ে আটকে যাবে না। প্যানে দুই চা চামচ চিনি ও দুই চা চামচ পানি নিয়ে জ্বাল দিতে হবে। ক্যারামেল তৈরি হলে সেদ্ধ করে রাখা ট্যাপিওকা বল দিয়ে দিতে হবে। এভাবে রেখে দিতে হবে আধা ঘণ্টা। চিনি মেশানো দুধে চা পাতা ফেলে জ্বাল দিয়ে একটি বড় গ্লাসে নিয়ে নিতে হবে। সেই গ্লাসে ট্যাপিওকা ও বরফের টুকরো দিয়ে পরিবেশন করতে হবে বাবল টি। দুধের সঙ্গে বিভিন্ন ফলের রস যোগ করে বাবল টিয়ে নিয়ে আসা হয় ফ্লেভার। 

তথ্য সহায়তা: রোর বাংলা