‘বিয়ের পর জানতে পারি স্বামী সমকামী’

প্রশ্ন: আমাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল। বিয়ের পর জানতে পারি স্বামী সমকামী। ডিভোর্স দিতে চাইলে পরিবার একেবারেই সাপোর্ট দেবে না। এখন কী করবো? সমকামিতা কি কখনও ঠিক হয়? বা কোনও চিকিৎসায় কি ভালো হয়?

উত্তর: সমকামিতা কোনও রোগ নয়। এটি একটি ব্যতিক্রমী কিন্তু স্বাভাবিক যৌনতা। মানুষ মার্তৃগর্ভে থাকার সময়ে জিনগত প্রভাব, মায়ের হরমোন ব্যালান্স, বিশেষ কিছু কেমিক্যাল এক্সপোজার, এবং মায়ের পারিপার্শ্বিক কিছু অবস্থা নির্ধারণ করে ঐ শিশুটি বড় হওয়ার সাথে সাথে তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন কেমন হবে। অর্থাৎ সে কি স্ট্রেট হবে না কি সমকামী হবে নাকি উভকামী হবে। মোটকথা ব্যাপারটি আমরা মার্তৃগর্ভে থাকার সময় নির্ধারিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে এটা কোনোভাবেই পরিবর্তন হয় না। এটা পরিবর্তনের এ যাবতকালের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে! সাইকিয়াট্রির পরিভাষায় একসময় এটাকে সংশোধনযোগ্য মানসিক সমস্যা মনে করা হলেও এখন আর তা মনে করা হয় না। আপনার পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আছে এবং সামাজিক ও ধর্মীয় ভাবধারা দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট নন, এমন একজন কাউন্সিলর বা মনেরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: সবসময় দুশ্চিন্তা করা কি কোনও রোগ? বেশিরভাগ সময় আমার মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা কাজ করে। অস্থির লাগে, মনে হয় আমার সঙ্গে খুব খারাপ কিছু হবে।

উত্তর: সবসময় দুশ্চিন্তা করা একটি মানসিক রোগ। এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন-

দুশ্চিন্তার পৌনঃপুনিক চক্র থেকে বেরিয়ে আসুন: আপনি যে অমূলক দুশ্চিন্তা রোগে ভুগছেন তা থেকে প্রাথমিক অবস্থায় নিজের চেষ্টায় বের হয়ে আসাটা একটু কঠিন। কারণ আমরা যতোই এ ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করবো, ততোই তা আমাদেরকে গ্রাস করবে। এই চক্র থেকে বের হতে হলে প্রথমে আপনাকে দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করতে হবে। কারণ এ যুদ্ধে কখনোই আপনি জিততে পারবেন না।

নিজের মধ্যে আসা সব ধরনের আবেগ অনুভূতিকে মেনে নিন: প্রথমে আপনাকে মনের মধ্যে আসতে থাকা অহেতুক দুশ্চিন্তাসহ সব ধরনের আবেগ, অনুভূতি, চিন্তা মেনে নিন। যখন আপনি এই অহেতুক দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দেবেন, তখন আপনার ভেতরে ধীরে ধীরে একটা প্রশান্তি চলে আসবে। এভাবে চর্চা করতে থাকলে আপনি একসময় অহেতুক দুশ্চিন্তাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে পারবেন। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আপনাকে অবশ্যই কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে!

স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। যোগা, ধ্যান, দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবল বাড়ান।

স্ট্রেস হ্রাসের উপায় শিখুন: ধ্যান, প্রাণায়াম, সংগীত শুনুন বা কার্যক্রম চর্চা করুন যা আপনাকে শান্তি ও স্বাস্থ্যকর মনোভাব দেবে।

ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভিতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখনই একটানা কয়েকবার এ রকম করুন।

নিজের পরিচর্যা করুন: নিজের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন। শ্রান্তি নিন এবং সুস্থ খাবার খান। মেডিটেশন করুন। যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন।

সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন: সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি করে অংশগ্রহন করুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। দেখবেন আপনার এংজাইটি কমে গেছে।

ধৈর্য ধরুন: ধৈর্যশীলতা বজায় রাখুন এবং পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত করুন। দেখবেন সকল অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পেরেছেন। 

কাউন্সিলর বা চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন: যদি আপনার দুশ্চিন্তা বেশি দিন ধরে চলে বা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর তা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, তাহলে একজন কাউন্সিলর বা মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।