চিয়া সিড কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে?

সুপারফুড হিসেবে জনপ্রিয় চিয়া বীজ আমাদের পানিশূন্যতা রোধ করে। ফাইবারে পরিপূর্ণ ছোট্ট এই বীজ প্রদান করে প্রোটিনও। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস চিয়া বীজ। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজও মেলে।  তবে প্রতিদিন চিয়া বীজ খাওয়া কি নিরাপদ?

বিশেষজ্ঞরা চলছেন, প্রতিদিন চিয়া বীজ খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তবে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। ডাক্তাররা সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে ২ টেবিল চামচ (১৫ থেকে ৩০ গ্রাম) চিয়া বীজ খাওয়ার পরামর্শ দেন। অতিরিক্ত পরিমাণে চিয়া বীজ খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। জেনে নিন সেগুলো কী কী।

  • চিয়া বীজ দ্রবণীয় ফাইবারে পরিপূর্ণ। এগুলো তাদের ওজনের ১২ গুণ পর্যন্ত পানি শোষণ করতে পারে। আপনি যখন চিয়া বীজের পানি পান করেন, তখন বীজগুলো প্রসারিত হয় এবং জেলের মতো সামঞ্জস্য তৈরি করে। এই উচ্চ ফাইবার সামগ্রী সাধারণত হজমের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে এটি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হলে বা আপনার পরিপাকতন্ত্র যদি উচ্চ ফাইবার গ্রহণে অভ্যস্ত না হয় তবে এটি হজমের অস্বস্তিও হতে পারে। পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস বা পেটে ব্যথা হতে পারে। যদিও ফাইবার স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য, তবে অতিরিক্ত খাওয়া নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
  • চিয়া বীজের প্রতি অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে কারোর কারোর। চিয়া বীজে প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে যা সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদিও এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিরল।
  • চিয়া বীজে উচ্চ পরিমাণের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা রক্ত ​​জমাট বাঁধাতে সহায়ক। তাদের সম্ভাব্য রক্তচাপ-হ্রাসকারী প্রভাবও রয়েছে। আপনি যদি রক্ত ​​পাতলা করার ওষুধ বা রক্তচাপের জন্য ওষুধ গ্রহণ করেন, তাহলে প্রচুর পরিমাণে চিয়া বীজ খাওয়া এই প্রভাবগুলোকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • চিয়া বীজ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পানি শোষণ করতে পারে এবং আকারে প্রসারিত হয়। যদি চিয়া বীজ শুষ্ক বা অপর্যাপ্ত তরল খাওয়া হয়, তবে সেগুলো পরিপাকতন্ত্রে ফুলে যেতে পারে এবং সম্ভাব্যভাবে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বাধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।
  • চিয়া বীজ ক্যালোরি সমৃদ্ধ। ফলে চিয়া বীজের পানি পান করলে ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়। যদি প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয় বা যদি অন্যান্য ক্যালোরিযুক্ত খাবার বা পানীয়গুলোতে চিয়া বীজ যোগ করা হয়, তবে ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যায়। অত্যধিক ক্যালোরি গ্রহণ এড়াতে পরিমিত খান চিয়া বীজ।

তবে পরিমিত পরিমাণে চিয়া বীজ খেলে মিলবে নানা ধরনের উপকার। জেনে নিন সেগুলো কী কী।

  • চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় ও হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 
  • চিয়া সিড স্বাস্থ্যকর হজমে সহায়তা করতে পারে। এটি নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। 
  • ফাইবারের দারুণ উৎস চিয়া বীজ। দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় ৯.৮ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে। পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহণ করলে করোনারি হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, প্রদাহ, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। ভালো থাকে অন্ত্রের স্বাস্থ্যও।
  • চিয়া বীজ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে এবং পেট পরিপূর্ণ করে তোলে। ফলে কম ক্যালোরি খাওয়া হয়।
  • রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে চিয়া বীজ। 
  • চিয়া বীজে নয়টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। চিয়া বীজের প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হার্ভার্ড হেলথ