X
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘আমি কিছুতেই সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারছি না’

জীবনে চলার পথে বিভিন্ন কারণে বিষণ্ণতা ঘিরে ধরতে পারে, থমকে যেতে পারে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। হতাশার এই সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা সাহায্য করতে পারে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। বাংলা ট্রিবিউনের নিয়মিত আয়োজনে আপনার মনের কথাগুলো শুনে পরামর্শ দেবেন মনোরোগ চিকিৎসক আতিকুল হক। পরিচয় গোপন রেখে যেকোনো ধরনের মানসিক টানাপোড়েনের বিষয় আমাদের জানাতে পারেন এখানে- [email protected]

জীবনযাপন ডেস্ক
১৮ মে ২০২৫, ০৯:২৪আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ০৯:২৪

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৮ বছর। আমি কিছুতেই সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারছি না। সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিলাম কলেজে উঠে, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। এরপর অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়তে, কিন্তু পারিনি। এখন আমার সন্তান আছে, স্ত্রী আছে। ওদের জন্য হলেও আমাকে ভালো থাকতে হবে এটা বুঝি। কিন্তু কোনোভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কী করবো?

উত্তর: ১. দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও মানসিক প্রস্তুতি: একটি কাগজে লিখুন কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চান। যেমন: সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যৎ, নিজের সুস্বাস্থ্য, আর্থিক সাশ্রয় ইত্যাদি। এই কাগজটি সবসময় সাথে রাখুন এবং যখন ধূমপানের ইচ্ছা হবে, তখন এটি পড়ুন।

একটি নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করুন: ধূমপান ছাড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। তারিখটি খুব বেশি দূরে বা খুব কাছে যেন না হয়।

পরিবার ও বন্ধুদের জানান: আপনার সিদ্ধান্তের কথা আপনার স্ত্রী, পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের জানান। তাদের সহযোগিতা ও উৎসাহ আপনাকে এই কঠিন সময়ে শক্তি যোগাবে।

২. পারিপার্শ্বিক সহযোগিতা ও বিকল্প অভ্যাস: যারা ধূমপান করে, তাদের সঙ্গ কিছুদিন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। তাদের সামনে ধূমপান না করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

নিকোটিনের বিকল্প (Nicotine Replacement Therapy - NRT): চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি নিকোটিন গাম, প্যাচ, লজেন্স বা ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো সিগারেটের ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়া শুধু নিকোটিনের জোগান দিয়ে ধূমপানের আকাঙ্ক্ষা কমাতে সাহায্য করে।

মুখের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প: যখন ধূমপানের ইচ্ছা হবে, তখন চিনিবিহীন চুইংগাম, লজেন্স, গাজর বা শসার টুকরা চাবাতে পারেন।

ব্যস্ত থাকুন: নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখুন। নতুন কোনো শখ তৈরি করুন, বই পড়ুন, ব্যায়াম করুন বা পরিবারের সাথে সময় কাটান।

৩. ট্রিগারগুলো শনাক্ত ও পরিহার করুন: কোন কোন পরিস্থিতিতে বা কাদের সাথে থাকলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা প্রবল হয়, সেগুলো চিহ্নিত করুন। যেমন: চা বা কফি খাওয়ার পর, কাজের ফাঁকে, মানসিক চাপের সময় ইত্যাদি। সম্ভব হলে এই ট্রিগারগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যদি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প কোনও অভ্যাস তৈরি করুন। যেমন: চা বা কফির পর ধূমপানের পরিবর্তে এক গ্লাস পানি পান করুন বা একটু হেঁটে আসুন। অথবা কয়েকদিন চা কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ধূমপানের ইচ্ছাও কমাতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ: ধূমপান ছাড়ার জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই কার্যকরী হতে পারে। তিনি আপনার শারীরিক অবস্থা ও অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিতে পারবেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ধূমপান নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাওয়া যায়। মনোবিজ্ঞানীর সাথে কাউন্সেলিং সেশন আপনাকে ধূমপানের মানসিক নির্ভরতা কাটাতে এবং নতুন স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করতে সাহায্য করতে পারে।

৬. নিজেকে পুরস্কৃত করুন: ধূমপান ছাড়া প্রতিটি দিন, সপ্তাহ বা মাসের জন্য নিজেকে ছোট ছোট পুরস্কার দিন। যেমন: জমানো টাকা দিয়ে নিজের বা পরিবারের জন্য কিছু কিনুন।

৭. পুনরায় শুরু করলে হতাশ হবেন না: অনেকেই প্রথম চেষ্টায় সফল হন না। যদি আবার ধূমপান শুরু করে দেন, তাহলে হতাশ না হয়ে আবার চেষ্টা করুন। প্রতিটি প্রচেষ্টা আপনাকে লক্ষ্যের আরও কাছে নিয়ে যাবে। কিছু বিষয় মনে রাখবেন: ধূমপান ছাড়ার প্রথম কয়েক সপ্তাহ কিছুটা শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি (যেমন - মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের সমস্যা) হতে পারে। এগুলোকে উইথড্রয়াল সিম্পটম বলে। ধৈর্য ধরলে এগুলো ধীরে ধীরে কেটে যায়। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে নিকোটিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ফল ও সবজি বেশি করে খান।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২২ বছর, আমার স্বামী আমার চেয়ে বয়সে ১০ বছরের বড়। সে অনেক বেশি বাস্তববাদী, কিন্তু আমি বাস্তবতা বুঝি কম। ফলে আমাদের ভিন্নমত থাকেই। আমার এক্সপেকটেশনের সাথে সে পেরে ওঠে না। আমি চাই কোনও রেস্টুরেন্টে গিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করতে, সে চায় বাসায় বসে রেস্ট নিতে। কীভাবে এসবের সমাধান করবো?

উত্তর: ১. খোলাখুলি আলোচনা ও বোঝাপড়া: যখন আপনারা দুজনেই শান্ত এবং মনোযোগী থাকবেন, তখন আপনার অনুভূতি ও প্রত্যাশাগুলো আপনার স্বামীকে জানান। তাকে বলুন যে আপনি কেন ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের মতো বিষয়গুলো চান। এটা যে শুধু একটা ডিনার নয়, এর সাথে আপনার আবেগ ও সম্পর্কের গভীরতা জড়িত, সেটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। তার দিকটাও বোঝার চেষ্টা করুন। তিনি কেন বাসায় থাকতে পছন্দ করেন, সেটাও জানার চেষ্টা করুন। হতে পারে তিনি সারাদিনের কাজের পর ক্লান্ত থাকেন অথবা তার কাছে ভালোবাসার প্রকাশ বা অবসর কাটানোর ধারণা ভিন্ন। তার বাস্তববাদী হওয়ার কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।

অভিযোগের সুরে কথা না বলা: ‘তুমি কখনোই আমার কথা শোনো না’ বা ‘তুমি শুধু নিজেরটাই বোঝো’- এমন অভিযোগ না করে আপনার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করুন। যেমন: ‘আমার খুব ভালো লাগবে যদি আমরা মাঝে মাঝে বাইরে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাই, এটা আমাকে বিশেষ অনুভব করায়।’

২. মধ্যপন্থা অবলম্বন: সবসময় একজনের ইচ্ছা পূরণ না করে মাঝামাঝি বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করুন। যেমন এক মাসে একদিন বাইরে ডিনারে গেলেন, আরেক মাসে বাসায় তার পছন্দের কোনও খাবার তৈরি করে একসাথে সময় কাটালেন। বড় আয়োজনের জন্য অপেক্ষা না করে ঘরেই ছোট ছোট রোমান্টিক মুহূর্ত তৈরি করতে পারেন। যেমন কোনোদিন হয়তো আপনিই মোমবাতি জ্বালিয়ে, পছন্দের পোশাক পরে, হালকা মিউজিক ছেড়ে ঘরেই একটি সুন্দর ডিনারের আয়োজন করলেন। এতে আপনার স্বামীও হয়তো ধীরে ধীরে বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহী হবেন।

নতুন কিছু একসাথে চেষ্টা করুন: এমন কিছু কাজ খুঁজে বের করুন যা আপনারা দুজনেই উপভোগ করতে পারেন। এটা হতে পারে একসাথে সিনেমা দেখা, কোনো শখের কাজ করা বা কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসা।

৩. প্রত্যাশার ভারসাম্য: এটা বুঝতে হবে যে সঙ্গীর সব প্রত্যাশা পূরণ করা হয়তো সবসময় সম্ভব হয় না, সেটা আপনার দিক থেকেও এবং তার দিক থেকেও। বাস্তবতার নিরিখে প্রত্যাশাগুলোকে কিছুটা মানিয়ে নিতে শিখুন। ভালোবাসার প্রকাশ শুধু রোমান্টিক ডিনার বা গিফট দেওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনার স্বামী হয়তো অন্যভাবে তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন, যেমন - আপনার খেয়াল রাখা, আপনাকে সমর্থন করা বা আপনার ছোট ছোট প্রয়োজনগুলো পূরণ করা। সেই প্রকাশগুলোকেও গুরুত্ব দিন।

৪. নিজেদের জন্য কোয়ালিটি টাইম তৈরি: দুজনে মিলে আগে থেকে পরিকল্পনা করুন যে আপনারা মাসে বা সপ্তাহে অন্তত কিছুটা সময় শুধু নিজেদের জন্য রাখবেন, যেখানে কোনও কাজ বা অন্য কোনও চিন্তা থাকবে না। সেই সময়ে আপনারা একে অপরের সাথে কথা বলবেন, নিজেদের ভাবনাগুলো শেয়ার করবেন। মনে করার চেষ্টা করুন, সম্পর্কের শুরুতে আপনারা কীভাবে সময় কাটাতেন বা কোন বিষয়গুলো আপনাদের আনন্দ দিত। সেগুলো আবার করার চেষ্টা করতে পারেন।

৫. ধৈর্য্য ধরা ও সময় দেওয়া: মানুষের অভ্যাস বা চিন্তা-ভাবনা একদিনে পরিবর্তন হয় না। ধৈর্য্য ধরুন এবং সঙ্গীকে সময় দিন। আপনার ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ ও বোঝানোর চেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার মধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। যদি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বা চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে একজন ম্যারেজ কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। তিনি আপনাদের দুজনকে সঠিকভাবে গাইড করতে পারবেন। এটা মনে রাখা জরুরি যে, প্রতিটি সম্পর্কই স্বতন্ত্র এবং এর চ্যালেঞ্জগুলোও ভিন্ন। আপনার স্বামী বাস্তববাদী মানে এই নয় যে তিনি আপনাকে ভালোবাসেন না। তার ভালোবাসার প্রকাশ এবং জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়াই একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি। আপনার এবং আপনার স্বামীর জন্য শুভকামনা।

/এনএ/
সম্পর্কিত
রোদ ছাড়া আর যেসব উপায়ে পেতে পারেন ভিটামিন ডি
প্রতিদিন মাত্র একটি আপেল খেলেই এই উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
হিট স্ট্রোক সম্পর্কে যা কিছু জানা জরুরি
সর্বশেষ খবর
এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের প্রস্তুতি কমিটি গঠন
এনসিপির প্রকৌশল উইংয়ের প্রস্তুতি কমিটি গঠন
তামিমের সঙ্গী হতে পেরে উচ্ছ্বসিত ইমন
তামিমের সঙ্গী হতে পেরে উচ্ছ্বসিত ইমন
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম সংশোধন চাওয়া রিভিউয়ের পরবর্তী শুনানি ১ জুলাই
রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম সংশোধন চাওয়া রিভিউয়ের পরবর্তী শুনানি ১ জুলাই
‘তাণ্ডব’–এর পূর্বাভাস দিলেন শাকিব-জয়া!
‘তাণ্ডব’–এর পূর্বাভাস দিলেন শাকিব-জয়া!
সর্বাধিক পঠিত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষককে বরখাস্ত
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
নগর ভবনে উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে কঠোর হলো ভারত
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
বিমানের চাকা খুলে পড়ার কারণ সম্পর্কে যা জানা গেলো
ঝড়বৃষ্টি দেখে স্বামীকে ফোন, এসে দেখেন পড়ে আছে স্ত্রীর মরদেহ
ঝড়বৃষ্টি দেখে স্বামীকে ফোন, এসে দেখেন পড়ে আছে স্ত্রীর মরদেহ