সহবাস ৩০০০।। হামীম কামরুল হক

09
একে তো সে আমার চেয়ে বয়সে বেশ বড়, তারওপর আমার চেয়ে মাথাও লম্বা, আমার চেয়ে চাকরিও ভালো করত, ইউরোপ-আমেরিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিল, দেখতেও তেমন, সুন্দরী, সপ্রতিভ, নানান গুণে গুণী, সবমিলিয়ে পুরানো বাংলায় যাকে বলে কিনা বিদুষী নারী, তাহলে কী করে আমার মতো বয়সে ছোট, লম্বায় খাটো, প্রায় গুণহীন, অতি সাধারণ চেহারাসুরতের একটা পুরুষের সঙ্গে জীবনের এতটা সময় কাটিয়ে দিল? কারণটা গোপন। কাউকে বলা যাবে না। সে আর আমি ছাড়া কেউ আসল ব্যাপারটা জানে না। এই গোপনীয়তাই আমরা উপভোগ করেছি গত পঞ্চাশ বছর। তবে অন্যদের আমরা বলব, আমরা শিক্ষা নিয়েছি অতীত থেকে, সবসময় চিন্তা করেছি বর্তমান নিয়ে, আর কাজ করেছি ভবিষ্যতের জন্য। আর আমরা জেনেছিলাম, ভালোবাসা শুধু বোতাম খোলার শব্দ নয়। আমার বয়স এখন ৮০ বছর, আর ওর ১০০। এখনও সে নিজের হাতে লিখতে পারে, মানে কম্পোজ করতে পারে। বয়সের ভারে অতটা নুয়েও পড়েনি। এখনও কারো সাহায্য না নিয়ে হাঁটতে পারে। আমাদের কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। সে চেষ্টাও করিনি কোনোদিন। দুজনের দিক থেকে এটা ছিল একসঙ্গে থাকার বা এক ছাদের নিচে থাকার প্রথম চেষ্টা, আগে হলে বলা হতো দুজনেরই প্রথম বিয়ে। বিয়েশাদি আজকাল আর কেউ করে না। বেশিদিন কেউ কারো সঙ্গে থাকেই না। অবিরাম বদলে বদলে চলে। নিত্যনতুন সঙ্গী বেছে নেয়। এই ৩০০০ সালে আমাদের মতো এমন দীর্ঘস্থায়ী জুটি আর দ্বিতীয়টি নেই।

আজ বিকালে আমাদের সংবর্ধনা। শুনেছি, সেখানে সদ্য জুটি বাঁধা আর মোটামুটি দীর্ঘদিন, মানে বছর তিনেক, একসঙ্গে থাকা অসংখ্য নারীপুরুষ থাকবেন। আমি আজ সকাল থেকেই তাদের হাততালি শুনতে পাচ্ছি।


 

আরো পড়ুন-

জলজ ।। পাপড়ি রহমান