শাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা 

পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, গুলিবর্ষণ ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার এসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী। তিনি বলেন, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। মূলত মামলাটি প্রশাসনিক কারণেই করা হয়েছে। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় দুই থেকে তিনশ’ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

উপাচার্যের পদত্যাগ ছাড়া মাঠ ছাড়বেন না শিক্ষার্থীরা 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনরত দুই-তিনশ’ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ে।

শাবি শিক্ষক সমিতি স্তম্ভিত, মর্মাহত এবং লজ্জিত

এছাড়াও পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীরা সেদিন সোয়া ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা অবধি ক্যাম্পাসে অবস্থান করে থেমে থেমে পুলিশের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জানমাল, আগ্নেয়াস্ত্র ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ১১ রাউন্ড রাবার কার্তুজ ও ২০ রাউন্ড সিসা কার্তুজসহ মোট ৩১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে। এছাড়া সিআরটি ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভিসিকে উদ্ধার করা হয়।

শাবির বিভিন্ন ভবনে ঝুলছে তালা, উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

মামলার বাদী উল্লেখ করেন, ইটপাটকেল ও ককটেলে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর), জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত), এসআই আসাদুজ্জামান, কাজী জামাল উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, এএসআই কামাল হোসেন, ফারুক আহমেদ, কনস্টেবল রকিবুল হাসান, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, ইয়ারুপ মিয়া, কাওছার হাবিব, শুকুর আলী আহত হন। তারা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। শিক্ষার্থীদের ছোড়া গুলিতে কনস্টেবল সাবিনা আক্তারের বাম পায়ে গুরুতর জখম হয়। ইটপাটকেলের আঘাতে কনস্টেবল সঞ্জিত দাসের ডান হাতের আঙুল ভেঙে যায়। সিআরটির কনস্টেবল ফাহাদ হোসেন অপুর মাথা ফেটে যায় ইটের আঘাতে।

ভিসির পদত্যাগ দাবিশাবিপ্রবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক হলের সমস্যা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরদিন রবিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রভোস্ট বডির পদত্যাগ ও হামলার বিচার দাবি করেন। 

আন্দোলনের মুখে বাসভবন থেকে বের হননি শাবি ভিসি

পরে বিকাল ৪টায় আইআইসিটি ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ উপস্থিত হয়। এ সময় ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ স্লোগানে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় লাঠিপেটার পাশাপাশি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে ভিসিকে উদ্ধার করে বাংলোতে পৌঁছে দেন। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

শাবি শিক্ষক সমিতি স্তম্ভিত, মর্মাহত এবং লজ্জিত

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। তবে শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

আরও পড়ুন:

ঢাবিতে শাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ও মশাল মিছিল

অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা, ছাড়তে হবে হল

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ, আহত শতাধিক 

শাবিপ্রবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল