গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অবৈধ সনদে চাকরির অভিযোগ

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সনদে দীর্ঘদিন চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ এমবিএ ও অভিজ্ঞতার সনদ ব্যবহার করে চাকরি করছেন তিনি। ১১ বছর পর সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মো. মোরাদ হোসেন ২০১১ সালের ২ এপ্রিল সহকারী রেজিস্ট্রার পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তৎকালীন উপাচার্য ড. এম খায়রুল আলম খান তাকে নিয়োগ দেন। তৎকালীন উপাচার্যের ছোট বােনের জামাই সুবাদে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে মোরাদের বিরুদ্ধে। 

২০১১ সালের ৪ মে বশেমুরবিপ্রবি/নিয়োগ/২৭/৮৫(৫) স্মারকে আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একই বছরের ১ আগস্ট সহকারী রেজিস্ট্রারের স্থায়ী পদে যোগ দেন মো. মোরাদ হোসেন।

তবে ওই বিজ্ঞপ্তির ৪ নম্বর শর্তে উল্লেখিত অভিজ্ঞতার সনদের পরিবর্তে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির অফিস আদেশের ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে দাখিল করেন মোরাদ হোসেন। এছাড়া শিক্ষা সনদ হিসেবে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এমবিএ পাসের সনদ জমা দেন তিনি।

মোরাদ হোসেনের জমা দেওয়া অফিস আদেশ ও এমবিএ সনদে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিজিপিএ ৩.৮৩ পেয়ে এমবিএ পাস করেন। এর আগে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০২ সালের ১৯ মে অ্যাডহকের মাধ্যমে সেকশন অফিসার পদে যোগ দেন। এরপর ২০০৬ সালের ১৯ জুন সিনিয়র অফিসার এবং ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন। অন্যদিকে মোরাদ হোসেনের দাখিল করা এমবিএ সনদে রোল, নিবন্ধন, ক্রমিক নম্বর ও শিক্ষাবর্ষ উল্লেখ নেই। 

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই উচ্চ আদালত ২০০৬ সালের পর থেকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম ও সনদ অবৈধ ঘোষণা করেন। তখন সিনিয়র অফিসার হিসেবে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন মোরাদ হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এইটুকু বলবো, আমি ২০০৮ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। ওই সনদ জমা দিয়েছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ছোট বোনের স্বামী মোরাদ হোসেনকে ভুয়া ও অবৈধ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার সনদে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরি দিয়েছেন তৎকালীন উপাচার্য এম খায়রুল আলম। ১১ বছর ধরে অবৈধভাবে চাকরি করছেন মোরাদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কি উ এম মাহবুব বলেন, ‘এসব বিষয় বাদ দেন তো আপনারা। বিষয়টি আপনারা বুঝতেছেন না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক তার বিরোধিতা করছেন। মোরাদ হোসেনকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করতেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা জানে, তাকে সরাতে পারলে আমি অকেজো হয়ে যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রার মোরাদ হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেছেন। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ডিগ্রি দিয়ে কি হবে? আমার ঘরের ভেতর হাজার সমস্যা। তার মধ্যে নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করার কোনও দরকার নেই।’

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০০২ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পে চাকরি করেন মো. মোরাদ হোসেন। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অস্থায়ী ভিত্তিতে সহকারী রেজিস্ট্রার ও একই বছরের ১ আগস্ট সহকারী রেজিস্ট্রারের স্থায়ী পদে যোগ দেন তিনি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপ-রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পান। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত মোরাদ হোসেন।