বুলিংয়ের অভিযোগ করলেন বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে ‘জড়িতরা’

সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একদল শিক্ষার্থী ক্রমাগত বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

শনিবার (৩০ মার্চ) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই অভিযোগ করেন। এ সময় ক্যামিকেল অ্যান্ড ম্যাটারিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ, ২১ তম ব্যাচের অর্ঘ দাস এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল উপস্থিত ছিলেন। আরও ২০-২৫ জন উপস্থিত হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বুলিংয়ের ভয়ে তারা অংশ নেননি বলে এই শিক্ষার্থীরা দাবি করেন। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ‘বুলিংয়ের’ কিছু স্ক্রিনশট সাংবাদিকদের দেন।

সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ একদল নেতাকর্মী বুয়েটে ‘মহড়া’ দেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমসহ (ইমতিয়াজ রাব্বি) একদল শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অফলাইনে ও অনলাইনে নানাভাবে র‍্যাগিং ও বুলিংয়ের শিকার এবং নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষার্থীরা।

লিখিত বক্তব্যে ২০তম ব্যাচের আশিক আলম বলেন, ‘বুয়েটর সংবিধানে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে আইন আছে আমরা তাকে সম্মান করি। তবে এই সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে হিজবুত তাহরির, ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো কাজ করছে। আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় আমরাও দুঃখিত। তবে সে ঘটনার আবেগকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে সুনামগঞ্জে বুয়েটের ৩৪ শিক্ষর্থীকে গ্রেফতার করা হলে আমরা মৌলবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করি। সে ঘটনায় আমাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় এবং ৭০-৮০ জন মিলে দুই জনকে ডেকে ‘কালচারাল র‌্যাগিং’ করে। কারও পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পরিবার নিয়ে অশালীন মন্তব্য করা হয়।’

আশিক আলম বলেন, ‘একবার আমরা বন্ধুবান্ধব ও সিনিয়র-জুনিয়র মিলে ক্যাফেটেরিয়ায় কাচ্চি রান্না করে খাই। এটিকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সব ধরনের গ্রুপ ও ক্লাব থেকে বের করে দেওয়া হয় আমাদের। শিক্ষা উপকরণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ভালো খেলা সত্ত্বেও সব ধরনের খেল থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমাদের র‍্যাগার, খুনি, মাদকাসক্তসহ আরও অপবাদ দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনে আমরা ইফতার বিতরণ করি, সেখানেও আমাদের একই অপবাদ দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতে বুয়েট প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বুয়েটে প্রোগ্রাম করেছেন বলে দাবি করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রহিমের হলের সিট বাতিল করেছে প্রশাসন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেন। আগের ছয় দফা দাবি ‘আপডেট করে’উপস্থাপন করেন গণমাধ্যমের সামনে।

আরও পড়ুন...

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি স্থগিত 
সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৬ দফা দাবি বুয়েট শিক্ষার্থীদের
বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সিট বাতিল
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
বুয়েটে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৬ দফা