‘সিনিয়র সিটিজেন’ কার্ডের জটিলতা কাটেনি দুই বছরেও

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়দেশের এক কোটি ত্রিশ লাখ প্রবীণকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করা হলেও দুই বছরেও পরিচয়পত্র দিতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কবে নাগাদ দেওয়া যাবে, এ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এছাড়া  প্রবীণদের কোনও সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে পারেনি এই মন্ত্রণালয়। 

তবে পরিচয়পত্র না পাওয়ার জন্য জনবল সংকট ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অসহযোগিতাকে দায়ী করছে মন্ত্রণালয়। এদিকে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তা জানাতে পারছেন না মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

তবে প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, প্রবীণ ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া করা হয়েছে। আইন হলে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন প্রবীণরা। অর্থ মন্ত্রণালয় খসড়া আইনে অভিমত না দেওয়ায় খসড়া চূড়ান্ত হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কার্যক্রম) খন্দকার আতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অগ্রগতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) দায়িত্বে রয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।’     

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. শহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এখানে কিছুদিন আগে এসেছি। নতুন হিসেবে যতদূর জেনেছি, ইসি পরিচয়পত্র তৈরি করতে রাজি হয়নি। জাতীয় কমিটি রয়েছে, প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। ফাউন্ডেশন করা হবে প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে। বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা (উপসচিব) জানাতে পারবেন।’  

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন) মো. মোস্তফা কামাল মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে মন্ত্রণালয় থেকে পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কমিশন থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এরপর আর বিষয়টি এগোয়নি। এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি—কবে নাগাদ আলাদা পরিচয়পত্র করা যাবে। তবে প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আলাদা পরিচয়পত্র দেওয়া হবে সিনিয়র সিটিজেনদের।’  

পরিচয়পত্র তৈরি করার সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ারিং হচ্ছে। বছরে ছয় লাখ টাকা দিয়ে শেয়ারিং করা যাবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গত তিন বছরে আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনও আলাপ হয়নি।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সমাজ ও পরিবারে মূল্যায়ণ প্রতিষ্ঠা করা, শেষজীবন আনন্দময় করা এবং  প্রবীণদের কর্মমুখী রাখসাসহ প্রবীণদের সুযোগ-সুবিধা দিতে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৬০ ও এর বেশি বয়সী  নাগরিকদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতির বিধান রেখে ‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা’ প্রস্তুত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিসভা এই নীতিমলার অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ ব্যক্তিকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন।  

এরপর দুই বছর পার হয়ে গেলেও সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, সিনিয়র সিটিজেনদের পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে জাতীয় পরিচয়পত্রটি পিংক কালারের (গোলাপি রঙের) করে তাতে মনোগ্রাম ও ‘সিনিয়র সিটিজেন’ লিখে সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেয় ইসির কাছে।

ওই সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা উপসচিব সালমা সিদ্দিকা মাহতাব জানিয়েছিলেন, ‘দেশের প্রবীণদের ‘সিনিয়র সিটিজেন’ কার্ড দেওয়া হবে। এই পরিচয়পত্র দিতে হলে ইসির সঙ্গে ডাটা শেয়ার করতে হবে। কারণ দেশের কারা প্রবীণ নাগরিক তার সমস্ত তথ্যই রয়েছে  ইসির কাছে।

মন্ত্রণালয়ে দক্ষ জনবলের অভাবে ডাটা শেয়ারিং হচ্ছে না বলে জানায় একাধিক সূত্র। অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের লোকবল বাড়াতে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনসহ জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নতুন অর্গানোগ্রাম না হলে এবং জনবল না বাড়ালে এগুলো খুব সহজে হবে না বলেও সূত্র জানায়। 

প্রবীণ নীতিমালা অনুযায়ী সিনিয়র নাগরিকদের সমাজে বৈষম্যমুক্ত ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।একইসঙ্গে বলা হয়েছে—জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সম্পদ, মর্যাদা, লিঙ্গ নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকে।

আলাদা, বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ধরনের যানবাহনে আসন সংরক্ষণ করতে হবে প্রবীণদের জন্য। পাশাপাশি বিশেষ ছাড়ে টিকিট দেওয়া, আলাদা টিকিট কাউন্টার স্থাপন, তাদের জন্য দিবা-যত্নকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এছাড়া মৃত্যুর পরে দাফনের দায়িত্বও পালন করবে রাষ্ট্র।

অন্যদিকে তাদের সম্পদ রক্ষাসহ সঞ্চয় প্রকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা নেবে সরকার।

 আরও পড়ুন: নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ই-কমার্স খাতের ক্যাশ অন ডেলিভারি

/এমএনএইচ/