কোনও বিদেশি অতিথি না থাকলেও মধ্যবিত্তের বিয়ের দাওয়াতপত্রে ইংরেজি লেখার কারণ কী, এ প্রশ্ন তুলে তারা বলছেন, বাংলাকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগলে আপনি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির লড়াইটা লড়বেন কী করে। তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষাক্রমের ধরনের কারণে বাংলা প্রায় ‘দ্বিতীয় ভাষা’র মতো বিবেচনায় নেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
আজ থেকে ৬৭ বছর আগে এই দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরসহ নাম না-জানা শহীদ ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে রচনা করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। তাদের আত্মদানের স্মৃতিকে মনে রেখে দেশে উদযাপিত হয়ে আসছে অমর একুশে। এমনকি একুশ দিনটি এখন শুধু আমাদের একার নয়। বিগত ২০০০ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু যে স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছিল, সেই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এর আন্দোলনে কি আদৌ বাংলাদেশ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিথুন ব্যানার্জী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছি। কিন্তু বাংলা ভাষার জন্য রাষ্ট্র পাইনি।’ এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজের ওপর দায় বর্তাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কত কঠিন অ্যাপ ব্যবহার করছি স্মার্টফোনে। কিন্তু সামান্য বাংলায় এসএমএসটা লিখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। ভুলে গেলে চলবে না কোনও সমাজের ভাষা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কিত। যেকোনও একটি এদিক সেদিক হলে পুরোটা নিয়েই ডুবতে হয়।’
উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রায় তিন বছর পরও সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে বাংলা লেখা নিশ্চিত করা যায়নি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও ইংরেজি শব্দে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দেখা যায় হরদম। ২০১৪ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে সরকারি, বেসরকারি, গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন এবং মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বললেও সংশ্লিষ্টরাই অনেকে জানেন না।
সরকারি অধিদফতরগুলোতে বাংলা চালু হলেও সেটি শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি।এমনকি আদালতের কার্যক্রমে ও রায় লেখার ক্ষেত্রে বাংলা নিশ্চিত করা যায়নি। এবিষয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মঙ্গলবার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে বলেন, ‘সরকারি অধিদফতরগুলোতে বাংলা ভাষা চালু হলেও আদালতে সেটা বাস্তবায়ন করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। এজন্য আমরা খুবই দুঃখিত।’
ভাষা সৈনিক আহমেদ রফিক মনে করেন, আমরা এখনও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাইনি। তিনি বলেন, ‘বাংলা আজও রাষ্ট্রভাষা হয় নাই, এর কারণ হীনমন্যতা। ইংরেজি না বলতে পারলে আমরা নিজেদের শিক্ষিত মনে করি না। ইংরেজি, আরবি এবং বাংলা এই তিন ভাষার শিক্ষা ব্যবস্থা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তার ওপর আছে ইংরেজির সঙ্গে ইংরেজি ভার্সন, যেটা কিনা বাংলা ভাষাকে আরও এক পাশে সরিয়ে দিয়েছে।’
এদিকে এখনও আদালতের কাজে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত না হওয়া বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বীকার করতেই হবে, আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও হবে।’ কীভাবে নিশ্চিত হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবার আগে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে এবং দেশপ্রেম থাকতে হবে।’
/ইউআই/ এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
ফেসবুকজুড়ে একুশের গান, একুশই প্রাণ
ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি
একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলে গেছে পুলিশ!