ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তবে এখনই সব বলা যাচ্ছে না: মনিরুল ইসলাম

ডিবি কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় নাঈম আশরাফ
বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘কেবল আসামি ধরা পড়লো। এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।’

ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন। মনিরুল জানান, ‘বনানীতে ধর্ষণ মামলার বাদী ও তার বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আসামিদের কাছে যা পাচ্ছি তা তাদের কথার সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছি। হোটেলের অন্যান্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেইন আসামিকে কেবল ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটুকু বলতে পারি ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হয়েছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাকি কথা বলা যাবে।’সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা

ধর্ষণের ঘটনার সময় যে ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তা উদ্ধার করা যায়নি বলে জানান মনিরুল। তিনি বলেন, ‘ভিডিও রিকভার করতে পারিনি। জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। রিমান্ড শেষ পর্যায়ে। একজনের (সাদমান সাকিফ) আজ শেষ হবে। তাকে আবারও রিমান্ড চাওয়া হবে। তদন্তের প্রাথমিক দিকে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামিদের বক্তব্য পারস্পারিকভাবে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাস্তবের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সেগুলো মিলিয়ে দেখা হবে।’

ভিকটিমরা অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের শিকার হয়েছে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘এসব প্রশ্ন আমাদের মাথায় আছে।’ মনিরুল ইসলাম এসময় আবারও বলেন, ‘এ ধরনের কিছু হয়েছিল কিনা সবকয়টি তথ্যই আমরা বিবেচনায় রেখে তদন্ত করছি। আপনাদের মনে যে প্রশ্ন সেটি বুঝেছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসলে বলা যাচ্ছে না।’নাঈম আশরাফ

বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারের পর মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আনা হয়। এরপরই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পুলিশ। এর আগে বুধবার দিনগত দেড়টার পর তাকে রাজধানীর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ডিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বুধবার (১৭ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া থেকে নাঈমকে গ্রেফতার করে পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা।

ডিবির দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা জানান, নাঈম যার বাসায় আত্মগোপন করেছিল তার নাম মাতবর। তিনি নাঈমের  আত্মীয়।

নাঈমের প্রকৃত নাম আব্দুল হালিম। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নে। নিজের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  

এর আগে গত ১১ মে এই মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার (১৫ মে) সন্ধ্যার পর রাজধানীর নবাবপুর ও গুলশান থেকে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদের জন্মদিনের দাওয়াত দেয় দুই তরুণীকে। এরপর তাদের বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন।

/ইউআই/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 

বাংলাদেশি এক তরুণের আইএস জঙ্গি হয়ে ওঠার গল্প

নাঈমকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতো না মুন্সীগঞ্জ পুলিশ